গুনাহের উপলব্দি ও আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ: এইচ. এম নূর আলম ফয়সাল
গুনাহঃ উপলব্দিঃ আত্মসমর্পণ
ভূল করা বা গুনাহ করা মানুষের প্রকৃতি। যতবড় নেক বান্দা হোক না কেন, ছোটখাটো ভূল হলেও তার জীবনে কিছু বিচ্যুতি থাকবেই। গুনাহের হাজারো উপাদান আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। কেউ নফস ও শয়তানের ধোঁকায় গুনাহে জড়িয়ে পড়ছে। কেউবা নিজের অজান্তে গুনাহ করে ফেলছে। কেউবা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে গুনাহ করে ফেলছে অথবা কেউ অসচেতনতার কারনে গুনাহ করে ফেলছে।
কারো জীবনে গুনাহের পরিমাণ লক্ষ লক্ষ, কারো জীবনে হয়তো হাজার বা শতাদিক, আবার কারো
জীবনে হয়তো ২/১ টি গুনাহ। নবী-রাসূলগন ব্যতিত বেগুনাহগার দুনিয়াতে কেউই নেই।
গুনাহ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়! তবে গুনাহ করার পর উপলব্দি করতে পারাটাই আসল বিষয়। কেননা উপলব্দি মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। ভূল পথ থেকে ফিরে আসতে সাহস যোগায়। এজন্য দুনিয়াতে ভূল করেও কিছু মানুষ পরকালে নিষ্পাপ হয়েই রবের সামনে হাজির হবে। কেননা গুনাহের উপলব্ধি মানুষের মধ্যে নমনীয়তা সৃষ্টি করে, দ্বিতীয়বার ভূল না করার বিষয়ে দৃঢ়তা তৈরি করে।

আবার অনেকে আছে, উপলব্দি করে ঠিকই কিন্তু গুনাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা। কেননা সেই ব্যক্তি গুনাহ করার পর মহান রবের নিকট আত্মসমর্পণ করতে সাহস করেনি। নফসের খায়েসের কারনেই এটি হয়ে থাকে। অনন্তকালের মুক্তি ও সফলতার জন্য দুনিয়ার কিছু বিষয়কে অবশ্যই বিসর্জন দিতে হবে অন্যথায় দুনিয়া আমাদের সবকিছু গ্রাস করে ফেলবে আর পরকালে আমাদের ফলাফল হবে শূণ্য। এজন্য গুনাহ করার পর উপলব্দি করে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এতে করে আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশী হোন এবং তাকে ক্ষমা করে দিয়ে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দেন।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَسَارِعُوۡۤا اِلٰى مَغۡفِرَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيۡنَۙ
"দৌঁড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে"। (ইমরান-১৩৩)
قُلۡ يٰعِبَادِىَ الَّذِيۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَةِ اللّٰهِؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِيۡعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ
(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা যুমার: আয়াত-৫৩)
وَلَا تَايۡـٔسُوۡا مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِؕ اِنَّهٗ لَا يَايۡـَٔسُ مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡكٰفِرُوۡنَ-
“এবং তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, কেননা, কাফের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ: আয়াত-৮৭)
وَمَنۡ يَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ-
“পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে তার প্রভুর দয়া হতে নিরাশ হয়।” (সূরা হিজর: আয়াত-৫৬)
قَالَ عَذَابِىۡۤ اُصِيۡبُ بِهٖ مَنۡ اَشَآءُۚ وَرَحۡمَتِىۡ وَسِعَتۡ كُلَّ شَىۡءٍؕ-
“শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকেই দিয়ে থাকি কিন্ত আমার করুণা সব জিনিসের উপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে"। (সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৫৬)
কোন ব্যক্তি যদি দুনিয়ায় ভূল বা গুনাহ করার পরও সত্যিকার অর্থে সঠিক ও কল্যাণের পথে চলতে চাই তাহলে অবশ্যই তাকে সঠিক পথের অনুসারী হবে। তাই গুনাহ করার পর উপলব্দির সাথে অবশ্যই আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। তবেই আল্লাহ তায়ালা তাকে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দান করবেন।
আল্লাহ বলেন-
مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَكَرٍ اَوۡ اُنۡثٰى وَهُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡيِيَنَّهٗ حَيٰوةً طَيِّبَةًۚ
“যে ব্যক্তি সৎকাজ করে, সে পুরুষ হোক বা নারী, সে মু’মিন হলে আমি অবশ্যি তাকে ভালো জীবন যাপন করাবো।” (৯৭ আয়াত)
আল্লাহ তায়লা সূরা লাইলের (৫-১০) নং আয়তে ইরশাদ করেন-
فَاَمَّا مَنۡ اَعۡطٰى وَاتَّقٰىۙ
৫.) কাজেই যে (আল্লাহর পথে) ধন সম্পদ দান করেছে,
وَصَدَّقَ بِالۡحُسۡنٰىۙ
৬.) (আল্লাহর নাফরমানি থেকে) দূরে থেকেছে
فَسَنُيَسِّرُهٗ لِلۡيُسۡرٰىؕ
৭.) এবং সৎবৃত্তিকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ- সুবিধা দেবো।
وَاَمَّا مَنۡۢ بَخِلَ وَاسۡتَغۡنٰىۙ
৮.) আর যে কৃপণতা করেছে, আল্লাহ থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে
وَكَذَّبَ بِالۡحُسۡنٰىۙ
৯.) এবং সৎবৃত্তিকে মিথ্যা গণ্য করেছে,
فَسَنُيَسِّرُهٗ لِلۡعُسۡرٰىؕ
১০.) তাকে আমি কঠিন পথের সুযোগ-সুবিধা দেবো।
আর কোন ব্যক্তি যদি গুনাহ করতেই থাকে। উপলব্দি না করে। ভূলের জন্য আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ না করে। দুনিয়া ও আখেরাতে তার অবস্থা হবে খুবই শোচনীয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَمَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِىۡ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيۡشَةً ضَنۡكًا وَّنَحۡشُرُهٗ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ اَعۡمٰى-
"আর যে ব্যক্তি আমার 'যিকির' (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।” (তাহা:১২৪)
وَمَنۡ يَّعۡشُ عَنۡ ذِكۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَيِّضۡ لَهٗ شَيۡطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيۡنٌ-
"যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়।" (যুখরফ:৩৬)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِكُمۡ اَمۡوَالُكُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُكُمۡ عَنۡ ذِكۡرِ اللّٰهِۚ وَمَنۡ يَّفۡعَلۡ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ-
"হে, সেই সব লোক যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়। যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে"। (মুনাফিকুন:৯)
আল্লাহ! আমাদেরকে ভূলগুলো উপলব্দি করার এবং তোমার দিকে ফিরে যাওয়ার এবং আত্মসমর্পণ করে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
এইচ. এম নূর আলম ফয়সাল
লেখক ও ব্লগার
Comments
Post a Comment