দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)
দারসুল কুরআন
বিষয়ঃ মহান রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করণীয়
(সূরা- মুদ্দাসসির, আয়াত: ১-৭)
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْم
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (১) قُمْ فَأَنْذِرْ (২) وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ (৩) وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ (৪) وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ (৫) وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ (৬) وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ (৭)
[ ] সরল অনুবাদঃ
(১) হে বস্ত্র আচ্ছাদানকারী (২) ওঠো এবং সতর্ক করো (৩) এবং তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব বা মহত্ব ঘোষনা করো (৪) আর তোমার পোশাক পবিত্র রাখো (৫) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো (৬) অধিক প্রতিদানের আশায় কারো প্রতি অনুগ্রহ করো না (৭) এবং তোমার রবের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো।
[ ] নামকরণঃ
প্রথম আয়াতের ( الْمُدَّثِّرُ) শব্দটিকে এ সূরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এটিও শুধু সূরার নাম। এর বিষয় ভিত্তিক শিরোনাম নয়।
[ ] নাযিল হওয়ার সময়কালঃ
সূরার প্রথম সাতটি আয়াত পবিত্র মক্কা নগরীতে নবুওয়াতের একেবারে প্রাথমিক যুগে নাযিল হয়েছিল।
ইমাম যুহরী এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন এভাবেঃ (সূরা আলাক নাযিলের পর) “কিছুকাল পর্যন্ত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অহী নাযিল বন্ধ রইলো। সে সময় তিনি এতো কঠিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন যে, কোন কোন সময় পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সেখান থেকে নিজেকে নীচে নিক্ষেপ করতে বা গড়িয়ে ফেলে দিতে উদ্যত হতেন। কিন্তু যখনই তিনি কোন চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছতেন তখনই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সামনে এসে বলতেনঃ ‘আপনি তো আল্লাহর নবী’ এতে তাঁর হৃদয় মন প্রশান্তিতে ভরে যেতো এবং তাঁর অশ্বস্তি ও অস্থিরতার ভাব বিদূরিত হতো।” (ইবনে জারীর)
অপর এক বর্ণনায় বলা হয় - ওহী (সুরা আলাকা) নাযিলের বিরতির শেষভাগে একদিন রাসূল (স) পবিত্র মক্কায় পথ চলাকালে উপর দিক থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পান। তিনি উপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পান যে, সেই হেরা গুহায় আগমনকারী ফেরেশতা শূন্যমূলে একটি ঝুলন্ত আসনে উপবিষ্ট আছেন। ফেরেশতাকে এমতাবস্থায় দেখে তিনি হেরাগুহার অনুরূপ আবার ভীত-আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কনকনে শীত ও কম্পন অনুভব করে তিনি গৃহে ফিরে বললেন- زمِّلونى زمِّلونى অর্থাৎ চাদরাবৃত কর, আমাকে চাদরাবৃত কর । অতঃপর তিনি চাদরাবৃত হয়ে শুয়ে পড়লেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল-মুদ্দাস্সির এর প্রাথমিক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তাই আয়াতে তাকে المّدثر (অর্থাৎ ওহে চাদরাবৃত!) বলে সম্বোধন করা হয়েছে
প্রকাশ্যভাবে ইসলামের প্রচার শুরু হওয়ার পর প্রথমবার মক্কায় হজ্জের মওসুম সমাগত হলে সূরার অবশিষ্ট অংশ অর্থাৎ ৮ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত নাযিল হয়। ‘সীরাতে ইবনে হিশাম’ গ্রন্থে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
[ ] সূরার বিষয়বস্তুঃ
• সূরার শুরুতে মহান রবের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা বা তাওহিদের প্রতি আহ্বান এবং আহ্বানের ক্ষেত্রে রাসূল (স) এর শারিরীক ও আত্মিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
• ৮-১০ নং আয়াতে ন্যায় ও সত্যের অস্বীকার কারীদের কেয়ামতের দিন তারা যে অবস্থার সম্মুখীন হবে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
• ১১-২৬ নং আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অঢেল সম্পদ নেয়ামত হিসেবে পেয়ে এর বিনিময়ে ন্যায় ও সত্যের সাথে (ওলীদ ইবনে মুগীরা) যে চরম দুশমনি করেছে তার চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
• ২৭-৪৮ আয়াতে দোযখের ভয়াবহতা এবং কোন চরিত্রের ব্যক্তিরা এর এ ভয়াবহতার স্বীকার হবে তার বিবরন দেওয়া হয়েছে।
• ৪৯-৫৩ আয়াতে কাফেরদের রোগের মূল ও উৎস কি তা বলা হয়েছে।
• পরিশেষে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে, আল্লাহর কারো ঈমানের প্রয়োজন নেই যে, তিনি তাদের শর্ত পূরণ করতে থাকবেন। কুরআন সবার জন্য এক উপদেশবাণী যা সবার সামনে পেশ করা হয়েছে। কারো ইচ্ছা হলে সে এ বাণী গ্রহণ করবে। আল্লাহই একমাত্র এমন সত্তা, যার নাফরমানী করতে মানুষের ভয় পাওয়া উচিত। তাঁর মাহাত্ম্য ও মর্যাদা এমন যে, যে ব্যক্তিই তাকওয়া ও আল্লাহভীতির পথ অনুসরণ করে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। পূর্বে সে যতই নাফরমানী করে থাকুক না কেন।
[ ] আয়াতে কারীমার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ
সূরা মুদ্দাসিসর এর ১-৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স) এর প্রতি মানুষদেরকে তার শ্রেষ্ঠত্বের দিকে আহবান করার নির্দেশ দেন। এবং ৪-৭ নং আয়াতে আহ্বান করার প্রস্তুতি হিসেবে চারটি বিষয়ের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। যেমন-
1. পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।
2. যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকা
3. অধিক প্রতিদানের আশায় অতিমাত্রায় ইহসান না করা।
4. দ্বীনের পথে আহবানে সবর অবলম্বন করা।
• ০১ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ
অর্থ - "ওহে বস্ত্র আচ্ছাদিত ব্যক্তি'।
অত্র আয়াত থেকে এই সূরার নাম করন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা এটাই বুঝিয়েছেন যে, হে আমার প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ (স), তুমি চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছো কেন? তোমার ওপরে তো একটি মহৎ কাজের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করার জন্য তোমাকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে উঠে দাঁড়াতে হবে।
এ বিষয়ে শানে নুযুল অংশে আলোচনা করা হয়েছে, নবী (সা.) যেহেতু হঠাৎ জিবরাঈল (আ) কে আসমান ও পৃথিবীর মাঝখানে একটি আসনে উপবিষ্ট দেখে ভীত হয়ে পড়েছিলেন এবং সে অবস্থায় বাড়ীতে পৌঁছে বাড়ীর লোকদের বলেছিলেনঃ আমাকে চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত করো, আমাকে চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত করো। সেজন্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে এভাবে সম্বোধন করেছিলেন।
• ২ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ قُمْ فَأَنْذِر
অর্থ - "ওঠো অত:পর সতর্ক করো।
অর্থাৎ বস্ত্র ছেড়ে দিয়ে উঠে দন্ডায়মান হও। এবং তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করার নিমিত্তে মানুষদেরকে সতর্ক করো।কেননা তারা তাদের জীবন পরিচালনায় যেসব ভূল পন্থা অবলম্বন করতেছে তা থেকে তাদেরকে সতর্ক করে সঠিক পথে আনার দায়িত্ব তোমার ওপর অর্পন করা হয়েছে। অতএব বস্ত্র ঝেড়ে ফেলে দাও, এবং তোমার রবের নির্দেশিত পথে আহ্বান পূর্বক মানুষদেরকে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়- অন্যায় ইত্যাদির বিষয়ে সতর্ক কর।
পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪৫-৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স) এর আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন-
"হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরুপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রুপে, এবং আল্লাহর নির্দেশে তার প্রতি আহবানকারী উজ্জল প্রদীপ রুপে"।
সূরা ফাতিরের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
"আমি তোমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে। আর এমন কোন সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যার মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি"।
হযরত নূহ আলাইহিস সালামকেও নবুওয়াতের পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করার সময় একই আদেশ দেয়া হয়েছিল-
“তোমার নিজের কওমের লোকদের ওপর এক ভীষণ কষ্টদায়ক আযাব আসার পূর্বেই তাদের সাবধান করে দাও।” (নূহ, ১)
অর্থাৎ সুরা মুদ্দাসসির এর ২নং আয়াতটির অর্থ হলো, হে বস্ত্র আচ্ছাদিত হয়ে শয়নকারী, তুমি ওঠো। তোমার চারপাশে আল্লাহর যেসব বান্দারা অবচেতন পড়ে আছে তাদের জাগিয়ে তোল। যদি এ অবস্থায়ই তারা থাকে তাহলে যে অবশ্যম্ভাবী পরিণতির সম্মুখীন তারা হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের সাবধান করে দাও। তাদের জানিয়ে দাও, তারা “মগের মুল্লুকে” বাস করছে না যে, যা ইচ্ছা তাই করে যাবে, অথচ কোন কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে না।
• ৩নং আয়াতের ব্যাখ্যা: وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ
অর্থ- 'আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করো'।
পৃথিবীতে যতজন নবী ও রাসূল আগমন করেছেন, এটিই ছিলো তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। তথা মানুষদেরকে মহান আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেওয়ার প্রতি আহ্বান করাই ছিলো আম্বিয়াগনের প্রথম কাজ।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন যায়গায় আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যেমন-
"তুমি এখন সেই দ্বীনের দিকেই আহবান জানাও এবং যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছো সেভাবে দৃঢ়তার সাথে তা আঁকড়ে ধরো এবং এসব লোকের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করো না"। (শূরা-১৫)
" প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” (নাহল-৩৬)
সকল নবীদেরই প্রধান কাজ ছিলো মহান রবের একত্ববাদের দিকে আহ্বান করা। যেমন-
নুহ (আ) এর দাওয়াত - (আরাফ-৫৯)
হুদ (আ) এর দাওয়াত- (আরাফ-৬৫)
সামুদ (আ) এর দাওয়াত- (আরাফ-৭৩)
শুয়াইব (আ) এর দাওয়াত- (আরাফ-৮৫)
তাই একজন নবীর প্রথম কাজই হলো, অজ্ঞ ও মূর্খ লোকেরা এ পৃথিবীতে যাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতাপ মেনে চলছে তাদের সবাইকে অস্বীকার করবে এবং গোটা পৃথিবীর সামনে উচ্চ কণ্ঠে একথা ঘোষণা করবে যে, এ বিশ্ব-জাহানে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতাপ নেই। আর এ কারণেই ইসলামে “আল্লাহু আকবার” (আল্লাহই শ্রেষ্ঠ) কথাটিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। “আল্লাহু আকবার” ঘোষণার মাধ্যমেই আযান শুরু হয়। আল্লাহু আকবার একথাটি বলে মানুষ নামায শুরু করে এবং বার বার আল্লাহু আকবার বলে ওঠে ও বসে। কোন পশুকে জবাই করার সময়ও “বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার” বলে জবাই করে। তাকবীর ধ্বনি বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের সর্বাধিক স্পষ্ট ও পার্থক্যসূচক প্রতীক। কারণ, ইসলামের মহানবী (স) আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার মাধ্যমেই কাজ শুরু করেছিলেন।
• ৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ
অর্থ - 'আর তোমার পোশাক পবিত্র রাখো'।
মহান রবের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত মুহাম্মদ (স) এর প্রথম প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ ।
কেননা রসূলুল্লাহ (স) যে সমাজে ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন তা শুধু আকীদা-বিশ্বাস ও নৈতিক আবিলতার মধ্যেই নিমজ্জিত ছিল না বরং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক ধারণা সম্পর্কে পর্যন্ত সে সমাজের লোক অজ্ঞ ছিল। এসব লোককে সব রকমের পবিত্রতা শিক্ষা দেয়া ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাজ। তাই তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি যেন তাঁর বাহ্যিক জীবনেও পবিত্রতার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখেন।
নবী করীম (স) স্বভাবগত ভাবেই পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করতেন। তাই তিনি যেন সচেতনতার সাথে পোশাক পরিচ্ছদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখেন তারই শিক্ষা রয়েছে এই আয়াতে।
নৈতিক দিক দিয়ে পোশাক পবিত্রতার অর্থ হচ্ছে- পোশাক এমন হতে হবে যাতে অহংকার প্রকাশ পাবে না, তাতে কুরুচির ছাপও থাকবে না।
পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পরিচ্ছন্ন, তিনি পরিচ্ছন্নতা ভালোবাসেন। (তিরমিজি)
এক কথায় বলা যেতে পারে, এই আয়াতের তাৎপর্য হচ্ছে-
1. পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
2. পোশাক পরিচ্ছদ নৈতিক দোষত্রুটি থেকে পবিত্র রাখা।
3. নিজেকে পবিত্র রাখা।
• ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
অর্থ- 'অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো'।
অপবিত্রতা বলতে, আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার অপবিত্রতা হতে পারে, নৈতিক চরিত্র ও কাজ-কর্মের অপবিত্রতা হতে পারে আবার শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ এবং উঠা বসা চলাফেরার অপবিত্রতাও হতে পারে।
অর্থাৎ চিন্তা-চেতনা, আচার- ব্যাবহার, ও দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজকর্ম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের সামান্যতমও যেন অনুপ্রবেশ না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য মুহাম্মাদ (স) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় নির্দেশ এর অর্থ হবে এই যে, আপন পোশাক ও দেহকে বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখুন এবং অন্তর ও মনকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও চিন্তাধারা থেকে এবং কুচরিত্র থেকে মুক্ত রাখুন।
মহান আল্লাহ্ পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। যেমন- পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ অর্থাৎ অবশ্যই মহান আল্লাহ অধিক হারে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন।
হাদীসে পবিত্রতাকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে। তাই মুমিনগনকে সর্বাবস্থায় দেহ, স্থান ও পোশাককে বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে এবং অন্তরকে অভ্যন্তরীণ অশুচি থেকে পবিত্র রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে।
• ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ
অর্থ- 'অধিক প্রতিদানের আশায় কারো প্রতি অনুগ্রহ করো না'।
অত্র আয়াতের ব্যাখায় তাফহীমুল কুরআনে তিনটি অর্থ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
1. তুমি যার প্রতিই এহসান বা অনুগ্রহ করবে, নিস্বার্থভাবে করবে। তোমার অনুগ্রহ ও বদান্যতা এবং দানশীলতা ও উত্তম আচরণ হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ইহসান বা মহানুভবতার বিনিময়ে কোন প্রকার প্রার্থিব স্বার্থ লাভের বিন্দুমাত্র আকাংখাও তোমার থাকবে না। অন্য কথায় একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইহসান করো, কোন প্রকার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইহসান করো না।
2. নবুওয়াতের যে দায়িত্ব তুমি পালন করছো। যদিও তা একটি বড় রকমের ইহসান, কারণ তোমার মাধ্যমেই আল্লাহর গোটা সৃষ্টি হিদায়াত লাভ করছে। তবুও এ কাজ করে তুমি মানুষের বিরাট উপকার করছো এমন কথা বলবে না এবং এর বিনিময়ে কোন প্রকার ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করবে না।
3. তুমি যদিও অনেক বড় ও মহান একটি কাজ করে চলেছো কিন্তু নিজের দৃষ্টিতে নিজের কাজকে বড় বলে কখনো মনে করবে না এবং কোন সময় চিন্তাও যেন তোমার মনে উদিত না হয় যে, নবুওয়াতের এ দায়িত্ব পালন করে আর এ কাজে প্রাণপণ চেষ্টা-সাধনা করে তুমি তোমার রবের প্রতি কোন অনুগ্রহ করছো।
আল্লাহ তায়ালা এই শিক্ষা অন্য সকল নবী রাসূলকেও দিয়েছিলেন। যেমন- আল্লাহ তায়ালার বাণী,
( নুহ (আ) কুর্দিস্তানের অধীবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন) 'এ কাজে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই। আমাকে প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের'। (আশ- শু‘আরা, ১০৯)
(হুদ (আ) আদ জাতির উদ্দেশ্যে বলেন) 'আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের'। (আশ- শু‘আরা- ১২৭)
একইভাবে, সালেহ (আ) সামুদ জাতিকে উদেশ্য করে বলেন - (আশ- শু‘আরা- ১৪৫)।
লূত (আ) জর্ডান অধীবাসীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন- (আশ- শু‘আরা- ১৪৬)।
এবং শু‘আইব (আ) মাদায়েনবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- (আশ- শু‘আরা- ১৮০)।
• ৭ং আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
অর্থ- 'এবং তোমার রবের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো'।
যেহেতু ইহা নবুয়তের প্রাথমিক কাজ এবং মহান রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ঘোষনা নিয়ে মুহাম্মদ (স) এখনো ময়দানে নামেন নি, তাই তিনি বাহিরের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারনা নাও রাখতে পারেন। অর্থাৎ তিনি এই ঘোষনা নিয়ে ময়দানে নামলে তার সাথে কি কি নেতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে সে বিষয়ে তিনি না জানলেও আল্লাহ তায়ালা জানেন। তাই আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স) কে আগেই সবরের শিক্ষা দিয়েছেন।
অর্থাৎ হে নবী! যে কাজ আঞ্জাম দেয়ার দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে তোমাকে কঠিন বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হতে হবে। তোমার নিজের কওম তোমার শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। সমগ্র আরব তোমার বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লাগবে। তবে এ পথে চলতে গিয়ে যে কোন বিপদ-মুসিবতই আসুক না কেন তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সেসব বিপদের মুখে ধৈর্য অবলম্বন করো এবং অত্যন্ত অটল ও দৃঢ়চিত্ত হয়ে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে থাকো। এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, বন্ধুত্ব-শত্রুতা এবং ভালবাসা সব কিছুই তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এসবের মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজের অবস্থানে স্থির ও অটল থাকবে।
[ ] শিক্ষাঃ
1. রাসূল (স) এর অনুকরণে আমাদেরকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য দৃঢ়চিত্তে ঘোষনা দিতে হবে এবং আল্লহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক প্রচেষ্ঠা চালাতে হবে।
2. আয়াতে পবিত্রতার শিক্ষা আমাদের পরিধেয় বস্ত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মুমিন ও দায়ী হিসেবে আমাদের বিছানার চাদর, বালিসের কাভার, দরজা-জানালার পর্দা, আসবাব পত্র, গৃহের অভ্যন্তর এবং বহিরাংগন পরিচ্ছন্ন রাখাও এই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
3. বাহ্যিক পবিত্রতার পাশাপাশি সকল প্রকার শিরক, কুফর, ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখতে হবে।
4. আল্লাহর একত্ববাদ ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। বৈষয়িক কোন উদ্দেশ্য এখানে থাকবে না।
5. এ কাজ করতে গিয়ে বাতিলের আক্রমন ও বাঁধার সম্মুখীন হলে থেমে যাওয়া যাবে না। বরং দৃঢ়পদে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে সবর অবলম্বলের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
হে আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা! আমাদেরকে সকল প্রকার বাহ্যিক ও আত্মিক পংকিলতা থেকে পবিত্র থাকার মাধ্যমে দৃঢ়তার সাথে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে টিকে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।।।
এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল
ব্লগার ও লেখক
০৩.০৩.২০২০

আমিন,,
ReplyDeleteআল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক।।
জাজাকাল্লাহ খাইরান
ReplyDeletePost Copy Korlam Vi.
ReplyDeleteজাজাকাল্লাহ খাইরান
ReplyDeleteমাশা-আল্লাহ
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ খয়রান!
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ খয়রন? অনেক সুন্দর?
ReplyDeleteআমিন
ReplyDeleteতবে একজায়গায় ভূল হয়েছে। তা হলো কোরআনের আয়াতগুলো যেভাবে কোরআনে যেভাবে ডান দিক থেকে বা দিকে গেছে। আপনি ও সেভাবে সাজাতে পারেন।
ReplyDeleteমাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে
ReplyDeleteAMIN
ReplyDelete