আকীদা (ঈমান): পর্ব-০৪|| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল

আকীদা (ঈমান): পর্ব-০৪ 
(তাওহীদ)  

তাওহীদ শব্দটি 'ওয়াহদা' (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে৷ এর অর্থ হলো- কোন জিনিসকে একক হিসেবে নির্ধারন করা। অর্থাৎ একককৃত বস্তু ব্যতিত অন্য বস্তু হতে যেকোন বিধানকে অস্বীকার করে একককৃত বস্তুর জন্য তা সাব্যস্ত করা।

যেমন আমরা বলি, 'আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা'বূদ নেই'। যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল বস্তু হতে ইবাদাতকে (উলুহিয়্যাত) অস্বীকার করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা নির্ধারন করবে।

তাওহীদ বলতে , 'লা -ইলাহা ইল্লাহ' বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, এটাই হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। আবার কিছু বর্ণনায় এরসাথে وحده لا شريك له অর্থাৎ তিনি একক, তার কোন শরীক নেই ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে তাওহীদের ব্যাখ্যায় এটাই যথোপযুক্ত যে- ইবাদাত, উপাসনা, আরাধনা ইত্যাদির মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য ইবাদাত করা যাবে না।

মুশরিকরা আল্লাহকে উপাস্যকারী হিসেবে মানে কিন্তু তারা তার সাথে শরীক করে। তারা ইবাদাতের ক্ষেত্রে একমাত্র উপাস্যকারী হিসেবে আল্লাহকে মানে না, তার সাথে সহযোগী বা ছোট খোদায়ও বিশ্বাস করে। অতএব তাওহীদে বিশ্বাসের দৃঢ়তা হলো- বান্দার জীবনের সকল কিছুই আল্লাহর দিকে নিবদ্ধ হবে।

তাই ইমানদারদের সতর্ক থাকা উচিৎ, কোনভাবেই যেন নিজ কর্মকান্ডে শিরক প্রবেশ করতে না পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
 اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغۡفِرُ اَنۡ يُّشۡرَكَ بِهٖ وَيَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ يَّشَآءُ‌ۚ وَمَنۡ يُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤى اِثۡمًا عَظِيۡمًا‏

"আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না।এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহ হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে।" (সূরা নিসা- ৪৮)

ইতপূর্বে আমরা বলেছিলাম যে, আকীদার মূল কাঠামোই হলো তাওহিদ। তাওহিদের প্রকৃত অনুসরণকেই অনেকে আকীদা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। কেননা বান্দা যতকিছুই করুক (বিশ্বাস ও কাজ) সবকিছুই আল্লাহর বিধান ও আদেশের সাথে জড়িত। তাই তাওহিদের দৃঢ় বিশ্বাস ও তার বাস্তবায়নই আকীদার চুড়ান্ত রুপ।

কেউ যদি মনে করে 'আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই' একথা স্বীকার করা বা বিশ্বাস করার মধ্যেই আকীদা বা তাওহিদ সীমাবদ্ধ। তাহলে ঐব্যক্তির যেকোনো সময় বিশ্বাস বা আকীদার বিচ্যুতি ঘটতে পারে। শুধুমাত্র বিশ্বাসই যদি তাওহিদ হতো, তাহলে রাসূল (স) এর জীবদ্দশায় যারা আল্লহকে একমাত্র সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করতো তাদেরকে কাফের, মুশরিক বলা হতো না। তাদের জন্য নবী রাসূল প্রেরন করা হতো না, হেদায়েতের দিকে আহবান করা হতো না।

এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
 وَمَا يُؤۡمِنُ اَكۡثَرُهُمۡ بِاللّٰهِ اِلَّا وَهُمۡ مُّشۡرِكُوۡنَ‏‏‏
তাদের বেশীর ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। (ইউসুফ -১০৬)

মুসলিম বিদ্বানগন তাওহিদের বিশ্বাসকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন।
1. তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ
2. তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ
3. তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

★ তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ - সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসেবে বিশ্বাস করা।

পৃথিবীর সকল বস্তুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া অন্যকোন সৃষ্টিকর্তা নেই।

  يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَيۡكُمۡؕ هَلۡ مِنۡ خَالِقٍ غَيۡرُ اللّٰهِ يَرۡزُقُكُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۖ فَاَنّٰى تُؤۡفَكُوۡنَ‏

হে লোকেরা! তোমাদের প্রতি আল্লাহর যেসব অনুগ্রহ রয়েছে সেগুলো স্মরণ করো। আল্লাহ ছাড়া কি আর কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কোথা থেকে প্রতারিত হচ্ছো? (ফাতির-০৩)

 وَلَٮِٕنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ‌ فَاَنّٰى يُؤۡفَكُوۡنَۙ‏
"যদি তোমরা এদের জিজ্ঞেস করো, কে এদের সৃষ্টি করেছে তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, আল্লাহ। তাহলে কোথা থেকে এরা প্রতারিত হচ্ছে? (সূরা যুখরুফ-৮৭)

 قُلۡ هَلۡ مِنۡ شُرَكَآٮِٕكُمۡ مَّنۡ يَّبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيۡدُهٗ‌ؕ قُلِ اللّٰهُ يَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيۡدُهٗ‌ؕ فَاَنّٰى تُؤۡفَكُوۡنَ
"বলো, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক বানিয়েছ তাদের কেউ কি সৃষ্টি করতে পারে এবং ধ্বংসের পর পূনরায় সৃষ্টি করতে পারে? একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টি করেন এবং পূনরায় সৃষ্টি করেন৷ তোমরা কোন উল্টো পথে চলে যাচ্ছো (প্রতারিত হচ্ছো) ? (ইউনুস-৩৪)

আল্লাহ-ই একমাত্র রিজিকদাতা, তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক, তিনিই একমাত্র বিশ্ব পরিচালক।

 قُلۡ مَنۡ يَّرۡزُقُكُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ اَمَّنۡ يَّمۡلِكُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَمَنۡ يُّخۡرِجُ الۡحَىَّ مِنَ الۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ الۡمَيِّتَ مِنَ الۡحَىِّ وَمَنۡ يُّدَبِّرُ الۡاَمۡرَ‌ؕ فَسَيَقُوۡلُوۡنَ اللّٰهُ‌ۚ فَقُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ
"তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? শুনার ও দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে? কে প্রাণহীন থেকে সজীবকে এবং সজীব থেকে প্রাণহীনকে বের করে? কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা?” তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা (সত্যের বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে। ) সতর্ক হচ্ছো না? (ইউনুস-৩১)

কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা আল্লাহকে একমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালক হিসেবে স্বীকার করবে কিন্তু কর্মে তা মানবে না। তাদের ব্যাপারে সূরা আনকাবুতের ৬১-৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন।

 وَلَٮِٕنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ وَسَخَّرَ الشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ لَيَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ‌ۚ فَاَنّٰى يُؤۡفَكُوۡنَ
اللّٰهُ يَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ يَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَيَقۡدِرُ لَهٗؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيۡمٌ﴾
وَلَٮِٕنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡيَا بِهِ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَوۡتِهَا لَيَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ‌ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ‌ؕ بَلۡ اَكۡثَرُهُمۡ لَا يَعۡقِلُوۡنَ
 
৬১) যদি  তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র ও সূর্যকে কে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছেন তাহলে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ, এরপর এরা প্রতারিত হচ্ছে কোন দিক থেকে?
৬২.) আল্লাহই তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিযিক প্রসারিত করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা সংকীর্ণ করে দেন। নিশ্চিতভাবে আল্লাহ‌ সবকিছু জানেন।
৬৩.) আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে মৃত পতিত ভূমিকে সঞ্জীবিত করেছেন, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য কিন্তু অধিকাংশ লোক বোঝে না।

রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় আল্লাহর একত্ব স্বীকার করে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
﴿تَبٰرَكَ الَّذِىۡ بِيَدِهِ الۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌۙ‏
"অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি, যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন"। (সূরা মুলুক-০১)

সূরা মুমিনুনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

 قُل لِّمَنِ الۡاَرۡضُ وَمَنۡ فِيۡهَاۤ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
৮৪.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করোঃ যদি তোমরা জানো তাহলে বলো এ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা বাস করে তারা কার?
سَيَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰهِ‌ؕ قُلۡ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ‏﴾
৮৫.) তারা নিশ্চয় বলবে, আল্লাহর। বলো, তাহলে তোমরা সচেতন হচ্ছো না কেন?

 قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبۡعِ وَرَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِيۡمِ﴾
৮৬.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, সাত আসমান ও মহান আরশের অধিপতি কে?
 سَيَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰهِ‌ؕ قُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ‏﴾
৮৭.) তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বলো, তাহলে তোমরা ভয় করো না কেন? 

﴿ قُلۡ مَنۡۢ بِيَدِهٖ مَلَكُوۡتُ كُلِّ شَىۡءٍ وَّهُوَ يُجِيۡرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ‏﴾
৮৮.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো, কার কর্তৃত্ব চলছে প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর? আর কে তিনি যিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারে না?
 سَيَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰهِ‌ؕ قُلۡ فَاَنّٰى تُسۡحَرُوۡنَ‏
৮৯.) তারা নিশ্চয়ই বলবে, এ বিষয়টি তো আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত। বলো, তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছো কোথায় থেকে? 

মানুষের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব খুবই সীমিত। আর আল্লাহর রাজত্ব ও কর্তৃত্ব সর্বব্যাপী ও সকল কিছুকে বেষ্টনকারী। এই বিশাল রাজত্ব ও কর্তৃত্বের এক ও অদ্বিতীয় ব্যবস্থাপক এবং পরিচালক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা৷ সকল মাখলুক ও আসমান-জমীন সবকিছু তারই পরচিলনাধীন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَالۡاَمۡرُ‌ؕ تَبَارَكَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِيۡنَ
"জেনে রাখো, সৃষ্টি তারই এবং নির্দেশও (পরিচালনা) তাঁরই।  আল্লাহ বড়ই বরকতের অধিকারী। তিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক ও প্রতিপালক। (আরাফ-৫৪)


★ তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ- এককভাবে আল্লাহর ইবাদাত করার নাম তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ।

ইবাদাত-বন্দেগী ও নৈকট্য হাসিলের আরাধনা একমাত্র আল্লাহর নিকটই করতে হবে। কোন মানুষ, বস্তু কিংবা অন্য কোন সৃষ্টির নিকট নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা যাবে না। তাওহীদুল উলুহিয়্যাতেই ছিলো আরব মুশরিকদের আপত্তি। এ প্রকারের তাওহিদ অস্বীকার করার কারনেই জিহাদের মাধ্যমে মুশরিকদের সকল কিছু গ্রহন করে নেওয়াকে আল্লাহ হালাল করে দিয়েছিলেন। নবী রাসূলগনের অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো তাওহিদুল উলুহিয়্যাত বা মানুষদের আল্লাহর বন্দেগীর বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়ার দাওয়াত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِىۡ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوۡلاً اَنِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ وَاجۡتَنِبُوۡا الطّٰغُوۡتَ
প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” (নাহল- ৩৬)

﴿ وَالَّذِيۡنَ اجۡتَنَبُوۡا الطَّاغُوۡتَ اَنۡ يَّعۡبُدُوۡهَا وَاَنَابُوۡۤا اِلَى اللّٰهِ لَهُمُ الۡبُشۡرٰى‌ۚ فَبَشِّرۡ عِبَادِۙ﴾
"কিন্তু যেসব লোক তাগুতের দাসত্ব বর্জন করেছে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে তাদের জন্য সু-সংবাদ। [হে নবী (সা)] আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও"। (যুমার-১৭)

কেউ যদি ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যকোন ব্যক্তি বা বস্তুকেও মান্য করে থাকে তাহলে তার ইবাদাত গ্রহনযোগ্য হবে না। ইবাদাত হতে হবে একেবারে পরিশুদ্ধ। এর সাথে কোনকিছুর সংমিশ্রণ ঘটানো যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
 وَمَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِيَعۡبُدُوۡا اللّٰهَ مُخۡلِصِيۡنَ لَهُ الدِّيۡنَ ۙ حُنَفَآءَ وَيُقِيۡمُوۡا الصَّلٰوةَ وَيُؤۡتُوۡا الزَّكٰوةَ‌ وَذٰلِكَ دِيۡنُ الۡقَيِّمَةِؕ‏﴾
"তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন। (বায়্যিনাহ-০৫)
 
 هُوَ الۡحَىُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادۡعُوۡهُ مُخۡلِصِيۡنَ لَهُ الدِّيۡنَؕ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ‏﴾
"তিনি চিরঞ্জীব। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। সুতরাং সার্বিক আনুগত্য ও একনিষ্ঠার সাথে বিশুদ্ধভাবে তাকেই ডাক।গোটা সৃষ্টি জগতের রব আল্লাহর জন্যই সব প্রশংসা।" (মুমিন -৬৫)

রুবুবিয়্যাত ও আসমা ওয়াস সিফাতে পূর্ণ বিশ্বাস রেখেও যদি কোন ব্যক্তি কবর বা মাজারে যায় এবং কবরবাসীর ইবাদাত করে কিংবা তাদের জন্য মানত বা কুরবান করে তাহলে সে কাফের ও মুশরিক। মৃত্যুর পর তার ঠিকানা জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
‌ؕ اِنَّهٗ مَنۡ يُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيۡهِ الۡجَنَّةَ وَمَاۡوٰٮهُ النَّارُ‌ؕ وَمَا لِلظّٰلِمِيۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেছে তার ওপর আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর এ ধরনের জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ -৭২)


★ তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত- আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্য যেসব নাম সাব্যস্ত করেছেন এবং কুরআনে নিজেকে যেসব গুনে গুনান্বিত করেছেন সে সমস্ত নাম ও গুনাবলীতে আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মেনে নেওয়া।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -
اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ‌ؕ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰى
তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ। (ত্ব-হা - ০৮)

وَلِلّٰهِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰى فَادۡعُوۡهُ بِهَا
"সুন্দরতর নাম সমূহের অধিকারী আল্লাহ। সুতরাং সেসব নাম ধরে তোমরা তাকে ডাকো"। ( আরাফ- ১৮০)

অতএব পীর, বুজুর্গ বা অন্য কোন মানুষ কিংবা কোন বস্তুর নামে বা উসিলা করে আল্লাহকে ডাকা যাবে না। আল্লাহকে ডাকতে ও তার কাছে কিছু চাইতে একমাত্র আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নাম ও গুনাবলী উচ্চারণ করেই তাকে ডাকতে হবে। এক্ষত্রেও আরব মুশরিকদের আপত্তি ছিলো। এমনকি ইসলামী যুগ তথা হিজরী ২য় শতাব্দী থেকে শিরক ও বেদায়াতীরা এ প্রকারের তাওহিদের গুরুত্ব এড়িয়ে যায়।


তিন প্রকারের তাওহিদ একে অপরের সম্পূরক। বিশেষত তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ ও তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ তাওহিদুর রুবূবিয়্যার দাবীই হলো তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ বা তাওহিদুল ইবাদাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন -

 يٰٓاَيُّهَا النَّاسُ اعۡبُدُوۡا رَبَّكُمُ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ وَالَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ
الَّذِىۡ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّاَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخۡرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزۡقًا لَّكُمۡ‌ۚ فَلَا تَجۡعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا وَّاَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ‏﴾
'হে মানব জাতি। ইবাদাত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো'।
'তিনিই তোমাদের জন্য মাটির শয্যা বিছিয়েছেন, আকাশের ছাদ তৈরি করেছেন, ওপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের আহার যুগিয়েছেন। কাজেই একথা জানার পর তোমরা অন্যদেরকে আল্লাহর প্রতিপক্ষে পরিণত করো না।' (সূরা বাকারা ২১-২২)
 

তাওহিদের বিশ্বাসই আকীদার প্রধান উৎস। সমগ্র কুরআনের আলোচনা তাওহিদ কেন্দ্রিক। রেসালাতের প্রথম ও প্রধান কাজই ছিলো তাওহিদের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা। সুতরাং পরকালে সফলতা চাই, জান্নাতের সুখ ও ভোগ বিলাস উপভোগ করতে চাই এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি চাই এমন প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ নিজেকে তাওহিদের বিশ্বাসে সাচ্ছা করে গড়ে তোলা। প্রবৃত্তির কামনা বাসনা ও মানুষের সকল চিন্তা পরিহার করে সকল কাজে আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের আলোকে নিজেকে পরিচালনা করা।


আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০১
https://alor-moshal.blogspot.com/2020/06/blog-post.html

আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০২
https://alor-moshal.blogspot.com/2020/07/blog-post.html

আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০৩
https://alor-moshal.blogspot.com/2020/07/blog-post_4.html



Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ