আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০৩|| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল

আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০৩ 
(আরকানুল ঈমান) 

আমরা ইতপূর্বে জেনেছি যে, অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং কর্মে বাস্তবায়ন করাকে ঈমান বলে। তবে ইমাম আবু হানীফার দৃষ্টিতে - অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের নাম ঈমান। মৌখিক স্বীকারোক্তি ও কর্ম ঈমানের পরিপূরক। 

বাস্তবিক অর্থে কাজ ছাড়া ঈমানের পরিচয় ফলপ্রসূ নয়, আবার অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস ছাড়া ঈমানদার হওয়া যায় না। অতএব আকীদার প্রথম দাবীই হলো অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস। অতঃপর বিশ্বাসের দৃঢ়তার বাস্তব প্রমান হলো মানুষ আকীদা হিসেবে যা বিশ্বাস করবে তা কাজে বাস্তবায়ন করবে। 

ইসলামী আকীদা বিশ্বাস কি হবে বা একজন মানুষকে ঈমানদার হওয়ার জন্য কোন কোন বিষয়ে বিশ্বাস করতে হবে তা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। পরিভাষায় এগুলোকে 'আরকানুল ঈমান' বা ঈমানের ভিত্তি বলা হয়। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন - 
 يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَالۡكِتٰبِ الَّذِىۡ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوۡلِهٖ وَالۡكِتٰبِ الَّذِىۡۤ اَنۡزَلَ مِنۡ قَبۡلُ‌ؕ وَمَنۡ يَّكۡفُرۡ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓٮِٕكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلاًۢ بَعِيۡدًا‏ - 

"হে ঈমানদারগণ! ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি, আল্লাহ‌ তাঁর রসূলের ওপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তার প্রতি এবং পূর্বে তিনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার প্রতি। যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাবর্গ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ ও পরকালের প্রতি কুফরী করলো সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূর চলে গেলো"। (নিসা-১৩৬) 

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَيۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ‌ؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓٮِٕكَتِهٖ وَكُتُبِه وَرُسُلِهٖ- لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ- وَقَالُوۡا سَمِعۡنَا وَاَطَعۡنَا‌ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيۡكَ الۡمَصِيۡرُ‏
"রসূল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহ‌কে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলদেরকে মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “আমরা আল্লাহ‌র রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না। আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে প্রভু! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে।" (বাকারা-২৮৫) 

হাদীস শরীফে আকীদা বা ধর্ম বিশ্বাসকে ঈমান নামে অভিহিত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন-

"একদিন নবী করীম (স) লোকজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি (জিবরাইল) তার নিকট আগমন করে বলেন, ঈমান কি? রাসূল (স) বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রশ্নকারীই ভালো জানেন। তিনি (জিবরাইল) উত্তরে বলেন: (ঈমান এই যে) তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহয়, তার ফেরাশতাগনে, তার পুস্তক সমূহে, তার সাক্ষাতে, তার রাসূলগনে, তুমি বিশ্বাস করবে শেষ পূনরুত্থানে এবং তুমি বিশ্বাস করবে তাকদীর বা নির্ধারনের সবকিছুতে।
তিনি আবার প্রশ্ন করেন, ইসলাম কি? রাসূল (স) বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রশ্নকারীই ভালো জানেন। তিনি (জিবরাইল) বলেন: ইসলাম এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোন কিছুতে তার সাথে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং রামাদানের সিয়াম পালন করবে"। (বুখারী ও মুসলিম) 

উপরোক্ত হাদীসে আকীদার ক্ষেত্রে ঈমান ও কর্মের একটি সম্পর্ক সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ বিশ্বাসের দিক হলো ঈমান আর কর্মের দিক হলো ইসলাম। নিম্মোক্ত হাদীসে বিষয়টি আরো দৃঢ়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে- 

'রাসূল (স) বলেন- ইসলামের ভিত্তি ৫টি। আর তা হলো- একথা সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসূল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ পালন করা এবং রমজানের রোজা রাখা'। (বুখারী ও মুসলিম) 

কুরআন থেকে হেদায়েত লাভের ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালা ঈমান ও কর্ম কে শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন। তথা কুরআন পড়লেই হেদায়েত পাওয়া যাবে না কিংবা কিছু বিষয়ে বিশ্বাস করলেই আকীদা সহীহ হয়ে যাবেনা। আগে ঈমানদার হতে হবে এবং কর্মে ঈমানের বাস্তব রুপ প্রকাশ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

 الَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَيۡبِ وَيُقِيۡمُوۡنَ الصَّلٰوةَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ يُنۡفِقُوۡنَ﴾
 وَالَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِمَآ اُنۡزِلَ اِلَيۡكَ وَمَآ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ وَبِالۡاٰخِرَةِ هُمۡ يُوۡقِنُوۡنَ 
 
"যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে,নামায কায়েম করে এবং যে রিযিক আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।" (বাকারা-৩) 
আর যে কিতাব তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং "তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনে আর আখেরাতের ওপর একীন রাখে। (বাকারা-৪) "

সূরা বাকারার উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তায়ালা তিনটি বিশ্বাসের (তাওহিদ, কিতাব, আখেরাত) কথা উল্লেখ করেছেন। একইসাথে দুইটি কর্ম (নামাজ ও আল্লাহর পথে ব্যয়) সংযুক্ত করেছেন। 

কুরআনের অন্য অনেক আয়াতেও বিশ্বাসের সাথে কর্মের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

'তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ‌, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহ‌র অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহ‌র প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক–বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী। (বাকারা-১৭৭) 

অত আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বিত রুপই হলো ইসলাম। বাহ্যিকতার নাম ইসলাম নয়, প্রাণ বা কর্মবিহীন বাহ্যিকতায় কোন পূণ্য নেই।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, মৌখিক বিশ্বাসকে সাধারণভাবে ঈমান বললেও বিশুদ্ধ আকীদার চুড়ান্ত রুপ হলো বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বিত রুপ। 

ঈমানের অসংখ্য শাখাপ্রশাখা থাকলেও পবিত্র কুরআন- সুন্নাহর আলোকে ও ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এবং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে ইসলামী আকায়েদ বা ঈমানের আরকান হলো -৬ টি। 

1. আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলীর প্রতি ঈমান 
2. আল্লাহর ফেরেশতাগনের প্রতি ঈমান 
3. আল্লাহর রাসূলগনের প্রতি ঈমান (খতমে নবুয়ত সহ) 
4. আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান। 
5. পুনরুত্থান, কেয়ামত ও আখেরাতের প্রতি ঈমান
6. তাকদীরের প্রতি ঈমান

তবে সাধারণ অর্থে কালেমায়ে তাইয়েবা এবং কালেমায়ে শাহাদাতের মর্ম অন্তর দিয়ে মেনে নিয়ে মুখে উচ্চারণ এবং কর্মে পরিনত করাকেই ঈমান বলে। যেটাকে আমরা তাওহিদ বলে থাকি। এবং ইহা আকীদার প্রধানতম বিষয়। 

★ আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলীর বিশ্বাস বা তাওহিদের বিশ্বাস: 
বিস্তীর্ণ পৃথিবী, সৌরজগত, নক্ষত্র ইত্যাদি ঘটনাক্রমে সৃষ্টি হয়নি এবং তাদের ব্যবস্থাপনাও নিজ থেকে হয় না। আল্লাহ তায়ালা তার আপন কুদরতের মহিমায় এসব সৃষ্টি করেছেন। তিনি সকল সৃষ্টির একমাত্র মালিক ও ব্যবস্থাপক। 

পৃথিবীতে যা কিছুই দেখা যাই, সবই মহান রবের কুদরত আর সকল সৃষ্টিই তার নির্দেশের অধীন। একইভাবে মানুষও ঐ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার অধীন। একজন মানুষ তার জীবনে যা কিছুই করবে তার প্রতিটি বিষয় রবের হুকুম ও নির্দেশনা মেনেই করবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন - 

"যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো। (ইমরান-১৯১) 

প্রভুত্ত, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, জীবন-মৃত্য, লাভ-ক্ষতি, রিজিকের ব্যবস্থা ইত্যাদি সকল কিছু একমাত্র আল্লাহর দিকেই নিবদ্ধ করতে হবে। এটাই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
رَبُّ الۡمَشۡرِقِ وَالۡمَغۡرِبِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاتَّخِذۡهُ وَكِيۡلاً‏‏﴾
তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তাই (সকল বিষয়ে) তাঁকেই নিজের উকীল হিসেবে গ্রহণ করো। (মুজ্জাম্মিল-০৯) 

ভয় একমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে। হেদায়েত তার কাছেই চাইতে হবে। কুফর শিরক, বেদায়াত ইত্যাদি থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার নামই হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন - 
 اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغۡفِرُ اَنۡ يُّشۡرَكَ بِهٖ وَيَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ يَّشَآءُ‌ۚ وَمَنۡ يُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤى اِثۡمًا عَظِيۡمًا‏

"আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না।এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহ হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে।" (সূরা নিসা- ৪৮) 

(আল্লাহর প্রতি ঈমান বা তাওহিদ সম্পর্কে পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ)

★ফেরেশতাগনের ওপর ঈমান- 
ফেরেশতাগন স্বাধীনভাবে বা নিজেদের ইচ্ছামতো কিছুই করেন না। এমনকি তারা আল্লাহর শাসন ক্ষমতারও অধিকারী নয়। তারা মহান আল্লাহর এক অনুগত সৃষ্টি। ফেরেশতাগন নুরের তৈরি। তারা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষের কোন শ্রেণী নেই। তারা আল্লাহর হুকুমের অধীন। আল্লাহ তায়লার পক্ষ থেকে দেওয়া বিভিন্ন দায়িত্ব পালনই হচ্ছে তাদের একমাত্র কাজ। 

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহতে ফেরেশতাগনের ব্যাপারে অনুরূপ যেসকল বর্ণনা রয়েছে তার যথাযথ বিশ্বাস সহীহ আকীদার জন্য আবশ্যকীয়।

★আল্লাহর রাসূলগনের প্রতি ঈমান (খতমে নবুয়ত সহ)-
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) সহ পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও হেদায়তের অমীয় বাণী প্রচারের জন্য আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে আম্বিয়া হিসেবে মনোনীত করেছেন তাদের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম প্রধান দাবী। 

একজন মুমিনের আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হবে নবী (স)। মুমিনের নিকট মা,বাবা, সন্তান সবার থেকে বেশী প্রিয় হবে নবী করীম (স)। এটাই ঈমানের দাবী। আল্লাহ তায়ালা বলেন - 

 اَلنَّبِىُّ اَوۡلٰى بِالۡمُؤۡمِنِيۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ‌ 
নিঃসন্দেহে নবী ঈমানদারদের কাছে তাদের নিজেদের তুলনায় অগ্রাধিকারী (আহজাব-৬) 

নবীর ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো, তার পুরোপুরি আনুগত্য করা। সকল ক্ষেত্রে তার আনীত বিধানের অনুসারী হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু। (ইমরান-৩১) 

★আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান- 
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের হেদায়তের জন্য ছোট বড় বহু কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এ কিতাব সমূহের মধ্যে জীবন পরিচলনার সকল উপাদান তথা ধর্ম, আদর্শ, ইবাদত ইত্যাদি সবকিছুই উপস্থাপিত হয়েছে৷ 

নবী- রাসূলগন এসব কিতাবের অনুসরণ করতেন এবং তাদের অনুগামীদেরও একই নির্দেশ দিতেন। 

আসমানী কিতাব সমূহের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র কুরআন মাজীদই অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এবং তা কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ইসলামী আকীদায় পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হওয়ার জন্য কুরআন মাজীদের অনুসরণের পাশাপাশি সকল আসমানী কিতাবের মৌখিক স্বীকারোক্তি দেওয়া আবশ্যক। 

★পুনরুত্থান, কেয়ামত ও আখেরাতের প্রতি ঈমান-
দুনিয়াতে যা কিছুই করা হচ্ছে এর চুড়ান্ত বিনিময় প্রদান করা হবে পরকালে। কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর বিলুপ্তি ঘটবে। এরপর পুনরুত্থান ও বিচার এবং সবশেষ জান্নাত- জাহান্নাম। ইসলামী আকীদা বিশ্বাসে ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

মানুষের মধ্যে পরকালের ভয় ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা যত বাড়বে দুনিয়াতে ঈমানের সাথে পথচলা তার জন্য ততবেশী সহায়ক হবে। কেননা দুনিয়াতে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে মানা এবং রেসালাতের অনুসরণ করা এজন্যই প্রয়োজন, কারন এ বিশ্বাস ও অনুসরণের মানদণ্ডেই আখেরাতে হিসেব-নিকেশ হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
 مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَعَمِلَ صٰلِحًا فَلَهُمۡ اَجۡرُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَ‏
"যে ব্যক্তিই আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোন ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই"। (বাকারা-৬২) 

অতএব বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তির পরকালের বিশ্বাসের দৃঢ়তা যতবেশী তার ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের মজবুতিও ততবেশী। 

★তাকদীরের প্রতি ঈমান- 
তাকদীরের ওপর ঈমানের প্রকৃত অর্থ হলো, বিশ্ব প্রকৃতির মধ্যে ভালো-মন্দ যা কিছু আছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। 

এটি মূলত আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলীর ওপর ঈমানেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে হাদীসে তাকদীরকে আকীদার স্থায়ী বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। 

রাসূল (স) বলেন - 
کَتَبَ اللٰهُ مَقَادِيرَ الخَلاَٸِقِ قَبلَ اَن يّخلَقَ السَّمٰوٰتِ والاَرضِ بِخَمسِينَ اَلفَ سَنَةٍ- قال وَکَانَ عَر شُه عَلٰی المَاءِ ۔
"আসমান জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে আল্লাহ তার সৃষ্টিজগতের তাকদীর লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন,তখন আল্লাহর আরশ ছিলো পানির ওপর। অর্থাৎ তখন পানি ব্যতিত কোন সৃষ্টি ছিল না"। (মুসলিম) 

অতেব ঈমানদারের উচিৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত না হয়ে, রাব্বুল আলামীনের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং আল্লাহ তাকে যে উপায়-উপাদান ও শক্তি সামর্থ্য দিয়েছে তার আলোকে হক ও ইনসাফের পথে থেকে নিজেকে পরিচালনা করার চেষ্টা করা। 

.............. চলবে। 

আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০১ 
https://alor-moshal.blogspot.com/2020/06/blog-post.html 

আকীদা (ঈমান): পর্ব- ০২
https://alor-moshal.blogspot.com/2020/07/blog-post.html

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ