আগত ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাচতে করোনা মহামারীতেই রয়েছে বড় ধরনের শিক্ষা| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল

আগত ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাচতে করোনা মহামারীতেই রয়েছে বড় ধরনের শিক্ষা| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল  


করোনার এই সামান্যতম ভয়াবহতায় মানুষ আপনজনকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে! মানবতাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে! করোনায় আক্রান্ত স্বামীকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে প্রিয়তমা স্ত্রী, স্নেহের সন্তান থেকে ইচ্ছে করেই দূরে থাকছে পিতামাতা, পিতামাতার লাশ কিংবা আক্রান্ত দেহের নিকট যেতে প্রস্তুত নয় আদরের সন্তানরা!! এভাবেই কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি দুনিয়ায় মানুষের ভালোবাসায় পর্দা টেনে দিয়েছে।

নিজেকে বাচানোর জন্য কিংবা সুস্থ রাখার জন্য ব্যতিব্যস্ত সকল মানুষ। নিকট আপনজনের কাছে ঘেঁষতেও প্রস্তুত নয়। 

এরকমই একটি বাধ্যতামূলক ভয়াবহ দিন সবার জন্য অপেক্ষা করতেছে। যেদিন নিকট আপনজন সবাই সবার থেকে দূরে সরে যাবে, প্রাথমিকভাবে পরিচয় দিতেও প্রস্তুত হবে না। সকলে নিজেকেই রক্ষা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সে-সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আবাসায় বলেন- 

 فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّةُ
৩৩.) অবশেষে যখন সেই কান ফাটানো আওয়াজ আসবে (শিংগার শেষ ধ্বনি)। 

يَوۡمَ يَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِيۡهِۙ
৩৪.) সেদিন মানুষ পালাতে থাকবে- 

وَاُمِّهٖ وَاَبِيۡهِۙ‏
৩৫.) নিজের ভাই, বোন,

وَصَاحِبَتِهٖ وَبَنِيۡهِؕ 
৩৬.) মা, বাপ, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের থেকে।

لِكُلِّ امۡرِىٴٍ مِّنۡهُمۡ يَوۡمَٮِٕذٍ شَاۡنٌ يُّغۡنِيۡهِؕ‏
৩৭.) তাদের প্রত্যেকে সেদিন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে যে, নিজের ছাড়া আর কারোর কথা তার মনে থাকবে না।

বিচার দিবসের সেই কঠিন মুহুর্ত সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন-
"কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে বস্ত্রবিহীন, খালি পা ও খৎনা বিহীন অবস্থায় হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে। একথা শুনে আয়েশা (রা) জিজ্ঞেস করলেন। হে আল্লাহর রাসূল (স), নারী পুরুষ সবাইকেই বস্ত্রহীন অবস্থায় উঠানো হবে, আর সবাই একে অপরকে দেখবে? রাসূল (স) বলেন - হে আয়েশা! তখনকার অবস্থা এতই ভয়াবহ হবে যে, সবাই নিজ নিজ চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। কেউ কারো দিকে তাকানোর অবকাশ পাবে না।" (বুখারী) 

সুনানে আবু দাউদের এক হাদীসে আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত রয়েছে। একদিন আয়েশা (রা) রাসূল (স) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনারা কি কিয়ামতের দিন আপনাদের পরিবার পরিজনের কথা স্মরণ রাখবেন? উত্তরে রাসূল (স) বলেন, তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখবে না। তা হলো -
১) মিযানের কাছে- সেখানে প্রত্যেকে নিজের আমলনামা ভারী হয়, না হালকা হয় তা নিয়ে চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। 
২) যখন আমলনামা দিয়ে বলা হবে, ওহে! লও তোমার আমলনামা, পড়। তখন প্রত্যেকে এই চিন্তায় বিভোর থাকবে যে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হয় নাকি বাম হাতে।
৩)পুলসিরাতের কাছে, যখন তা জাহান্নামের দুই পার্শ্বের ওপর স্থাপন করা হবে।

এমনই এক বাধ্যতামূলক ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেছে৷ দুনিয়ার এই সামান্য বিপদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে যদি তুমি এতই সচেতনতা অবলম্বন করতে পারো তাহলে পরকালের সেই ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কেমন সচেতনতা প্রয়োজন। একবারো কি ভেবেছ??

সেদিন থাকবেনা আত্মীয়তার সম্পর্ক, থাকবে না ক্ষমতার দাপট, ধনী- গরীব কিংবা কালো- সাদার বৈষম্য। সেদিন সকল মানুষ দু'শ্রেনীতে বিভক্ত হবে। একশ্রেণী সফলকাম ও জান্নাতী অন্যশ্রেণী বিফল তথা জাহান্নামী। 
আল্লাহ তায়ালা সূরা আবাসায় ইরশাদ করেন- 
وُجُوۡهٌ يَّوۡمَٮِٕذٍ مُّسۡفِرَةٌۙ‏
৩৮.) সেদিন কতক চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,

ضَاحِكَةٌ مُّسۡتَبۡشِرَةٌ‌ۚ‏
৩৯.) হাসিমুখ ও খুশীতে ডগবগ করবে।

وَوُجُوۡهٌ يَّوۡمَٮِٕذٍ عَلَيۡهَا غَبَرَةٌۙ‏
৪০.) আবার কতক চেহারা হবে সেদিন ধূলিমলিন,

تَرۡهَقُهَا قَتَرَةٌؕ‏
৪১.) কালিমাখা।

اُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡكَفَرَةُ الۡفَجَرَةُ
৪২.) তারাই হবে কাফের ও পাপী।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন (সূরা ইনফিতার) - 
اِنَّ الۡاَبۡرَارَ لَفِىۡ نَعِيۡمٍ‌ۙ‏
১৩.) নিঃসন্দেহে নেক লোকেরা পরমানন্দে থাকবে

وَّاِنَّ الۡفُجَّارَ لَفِىۡ جَحِيۡمٍ ‌ۖ‌ۚ‏ 
১৪.) আর পাপীরা অবশ্যি যাবে জাহান্নামে।

يَّصۡلَوۡنَهَا يَوۡمَ الدِّيۡنِ‏
১৫.) কর্মফলের দিন তারা তার মধ্যে প্রবেশ করবে

وَمَا هُمۡ عَنۡهَا بِغَآٮِٕبِيۡنَؕ
১৬.) এবং সেখান থেকে কোনক্রমেই সরে পড়তে পারবে না।

অতএব অনন্তকালের যাত্রায় পাড়ি জমানোর পূর্বে এখনই সচেতন হওয়া উচিৎ। কিভাবে জীবন পরিচালনা করতেছি, কোন পথে আয় আর কোন পথে ব্যয় করতেছি, কি শিখতেছি, কি শিখাচ্ছি, জীবন-যৌবন কিভাবে অতিবাহিত করতেছি ইত্যাদি উপলব্দি করে এখনই সচেতন হতে হবে। মহাকালের ভয়াবহ দূর্যোগের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এখনই। অন্যথায় সঙ্গী-সাথী বিহীন হাশরের মাঠে দূর্ভাগাদের কাতারে শামিল হতে হবে। কেননা সেদিন কেউ কারো পক্ষে সুপারিশের সুযোগ পাবে না। বিচার ও কর্তৃত্বের একমাত্র ক্ষমতা আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

 يَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسٌ لِّنَفۡسٍ شَيۡـًٔا‌ؕ وَّالۡاَمۡرُ يَوۡمَٮِٕذٍ لِّلَّهِ
"এটি সেই দিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফায়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে।" (সূরা ইনফিতার-১৯) 

হে রাব্বুল আলামীন! আমাদেরকে উপলব্দি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল 
ব্লগার ও লেখক

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ