জান্নাতের বিবরণ | এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল
বিষয়ঃ জান্নাতের বিবরণ ও এর নিয়ামত সমূহ
[ ] জান্নাত’ শব্দের অর্থ- বাগান, পার্ক, গার্ডেন, উদ্যান ইত্যাদি। আরবিতে বাগানকে ‘রওজা’ এবং ‘হাদিকা’ও বলা হয়। কিন্তু জান্নাত শব্দটি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব একটি পরিভাষা। যার মৌলিক অর্থ গোপন বা আবৃত থাকা। বাগান যেহেতু গাছপালা দ্বারা আবৃত থাকে তাই বাগানকে জান্নাত বলা হয়।
[ ] জান্নাতের অস্তিত্বের প্রমাণঃ
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন- যখন রমজানের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শীকলবদ্ধ করা হয়। (মুসলিম)
ইবনে ওমর (রা)............... ' যখন তোমাদের কোন লোক মৃত্যু বরন করে তখন সকাল সন্ধা তার ঠিকানা তার সামনে পেশ করা হয়। যদি জান্নাতী হয় জান্নাত আর জাহান্নামী হলে জাহান্নাম (দেখানো হয়)।। (বোখারী)
[ ] জান্নাতের নামসমূহঃ
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে জান্নাতের আটটি নাম বর্নিত হয়েছে। যেমন -
১. জান্নাতুল ফেরদাউস
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
'তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে'। (মুমিনুন-১১)
২.জান্নাতুন নাঈম (নেয়ামত ভরা জান্নাত)
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ
মোত্তাকীদের জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে নেয়ামতের জান্নাত। (কলম-৩৪)
৩. জান্নাতুল মাওয়া
أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত। (সেজদাহ-১৯)
৪. জান্নাতু আদন
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَآؤُونَ كَذَلِكَ يَجْزِي اللّهُ الْمُتَّقِينَ
সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয় তাদের জন্যে তাতে তা-ই রয়েছে, যা তারা চায় এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহর পরহেযগারদেরকে। (নাহল-৩১)
৫. দারুস সালাম (নিরাপত্তার ঘর)
وَاللّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلاَمِ وَيَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
আর আল্লাহ শান্তি-নিরাপত্তার আলয়ের প্রতি আহবান জানান এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথ প্রদর্শন করেন। (ইউনুস-২৫)
৬. দারুল খুলদ
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ ذَلِكَ يَوْمُ الْخُلُودِ
তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন। (ক্বাফ-৩৪)
৭.দারুল মাকাম
الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ
যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন, তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি। (ফাতির-৩৫)
৮. দারুল কারার
وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ। (মুমিন-৩৯)
[ ] জান্নাতের সীমা-পরিসীমা ও প্রশস্ততা
وَسَارِعُواْ إِلَى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। (ইমরান-১৩৩)
জান্নাত এত সুবিশাল যে, হাদীসে রয়েছে- 'সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারীকে এই দুনিয়ার চেয়ে দশগুন বড় জান্নাত দেওয়া হবে।' (মুসলিম)
সর্বশেষ ব্যক্তিকে এতটুকু স্থান দেওয়ার পরেও জান্নাতে এত স্থান বাকী থেকে যাবে যে, তা পরিপূর্ণ করার জন্য আল্লাহ অন্য এক মাখলুখ সৃষ্টি করবেন। (মুসলিম)
'জান্নাতের বৃক্ষসমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (স) বলেন, জান্নাতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে, কোন অশ্বারোহী তার ছায়ায় শত বছর চলার পরেও সে ছায়া শেষ হবে না'। (বোখারী)
[ ] জান্নাতের দরজা
জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন ফেরেশতারা দরজা খুলে দেবে এবং নিরাপত্তা ও সংবর্ধনা দিবে।
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاؤُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
'যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর'। (যুমার-৭৩)
জান্নাতের দরজা সর্বপ্রথম উম্মুক্ত করা হবে রাসূল (স) এর জন্য। (আনাস ইবনে মালিক- মুসলিম)
জান্নাতের দরজা - ৮টি
1. রাইয়ান - যা দিয়ে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। (বোখারী)
2. বাবুস সালা - যা দিয়ে নামাজীরা প্রবেশ করবে।
3. বাবুল জিহাদ- যা দিয়ে জিহাদকারীরা প্রবেশ করবে।
4. বাবুস সাদাকাহ- যা দিয়ে দান খয়রাত কারী ব্যক্তিকে ডাকা হবে।
5. বাবু আয়মান- বিনা হিসেবে যারা জান্নাতী তাদেরকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো হবে।
6. বাবু আল কাজিমিনাল গাইজ, ওয়াল আফিনা আনিন্নাস - রাগকে দমনকারী ও অন্যকে ক্ষমাকারীর দরজা
7. বাবু আর রাজিয়িন- সন্তুষ্টদের দরজা
8. বাবু আত তাওবা - ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের দরজা
[ ] জান্নাতের স্তর
'জান্নাতের শত স্তর রয়েছে, আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে রয়েছে শতবছরের রাস্তার দূরত্ব'। (আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্থান ওয়াসীলা - যা শুধুমাত্র রাসূল (স) ই পাবেন। (মুসনাদ আহমদ)
জান্নাতের উন্নত স্থানসমূহ জান্নাতীদের স্তর অনুযায়ী উচু নিচু হয়।
لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللَّهِ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ
'কিন্তু যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্যে নির্মিত রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ। এগুলোর তলদেশে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না'। (যুমার-২০)
[ ] জান্নাতের অট্টালিকা
'জান্নাতের একটি ইট রুপার, আরেকটি ইট হবে স্বর্ণের। তার সিমেন্ট সুগন্ধিযুক্ত মিশকে আম্বরের। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের'। (আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
'জান্নাতের অট্টালিকা সমূহে সমস্ত প্লেট হবে সোনা রুপার, অট্টালিকা সমূহে সর্বদা চন্দন কাঠ জ্বলতে থাকবে যার কারনে অট্টলিকা সমূহ সর্বদা সুগন্ধিযুক্ত থাকবে, জান্নাতীদের ঘাম থেকে মেশকে আম্বরের গ্রান আসবে'। (আবু হুরাইরা -বুখারী)
জান্নাতের এসব অট্টালিকা সকল প্রকার ছোট বড় নাপাকী এবং ময়লা আবর্জনা থেকে পবিত্র থাকবে।
وَعَدَ اللّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
'আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনে কানন-কুঞ্জের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণ। তারা সে গুলোরই মাঝে থাকবে। আর এসব কানন-কুঞ্জে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুতঃ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হল মহান কৃতকার্যতা'। (তাওবা-৭২)
[ ] জান্নাতের তাবুঃ
প্রত্যেক জান্নাতীর অট্টালিকায় তাবু থাকবে যেখানে জান্নাতীরা অবস্থান করবে।
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৭২,৭৩)
জান্নাতের প্রতিটি তাবু ৬০ মাইল প্রশস্ত হবে। এসব তাবুতে জান্নাতীদের স্ত্রীরা অবস্থান করবে, যারা সর্বদায় তাদের স্বামীদের জন্য অপেক্ষমান থাকবে। ( আব্দুল্লাহ বিন কায়েস- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের বাজার
জান্নাতে প্রত্যেক জুমার দিন বাজার জমবে, জুমার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী জান্নাতীদের সৌন্দর্য পূর্ব থেকে বেশি হবে, মহিলারা বাজারে উপস্থিত হবে না এমনিতে ঘরে বসে থাকা অবস্থাই আল্লাহ তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দিবেন। (আনাস ইবনে মালিক- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের বৃক্ষ
জান্নাতে সকল প্রকারের ফলের গাছ থাকবে, তবে খেজুর, আনার, আঙ্গুরের গাছ বেশি থাকবে।
فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
তথায় আছে ফল-মূল, খর্জুর ও আনার। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৬৮,৬৯)
জান্নাতের বৃক্ষগুলোর শাখা সমূহ শষ্য শ্যামল, লম্বা ও ঘন হবে।
ذَوَاتَا أَفْنَانٍ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
উভয় উদ্যানই ঘন শাখা-পল্লববিশিষ্ট।
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৪৮,৪৯)
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ।
فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ।
وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ।
وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ।
وَمَاء مَّسْكُوبٍ।
وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ।
যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান। তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে। কাদি ভরা কলা বৃক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া। সাদা প্রবাহ পানি ও প্রচুর ফলমুল। (ওয়াকিয়া, ২৭-৩২)
জান্নাতের সকল বৃক্ষের মূল হবে স্বর্ণের
ما فی الجنة شجرة الا ساقها من ذهب
(আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
[ ] জান্নাতের খানা পিনা
জান্নাতের প্রথম খাবার হবে মাছ, এরপর পরবর্তী খাবার হবে গরুর গোশত। জান্নাতের প্রথম পানীয় হবে সালসাবীল কুপের পানি ( সাওবান রা. - মুসলিম)
[ ] জান্নাতের ফল
জান্নাতে জান্নাতীদের পছন্দমতো ফলমূল মজুদ থাকবে।
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ
وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنينَ
নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে। এবং তাদের বাঞ্ছিত ফল-মূলের মধ্যে।বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (মুরসালাত ৪১-৪৪)
জান্নাতীরা যখন খুশী এবং যেভাবে ইচ্ছা ফল ভক্ষন করতে পারবে।
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا
তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে। (দাহর-১৪)
জান্নাতের একটি ফলের শীষ যদি পৃথিবীতে আসতো, তাহলে আসমান ও জমীনের সকল মাখলুক তা খেয়ে শেষ করতে পারতো মা। (যাবের (রা)- আহমদ)
[ ] জান্নাতের নদী
পবিত্র কুরআনে ৪ ধরনের প্রবাহমান পানির নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব নদীসিমূহের পানীয়র রং ও স্বাদ সর্বদা একইরকম থাকবে।
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى
পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। (মুহাম্মদ -১৫)
এছাড়াও আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত মুসলিম শরিফের এক হাদীসে সাইহান, জাইহান, ফোরাত ও নীল কে জান্নাতের নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
سيحان وجيحان والفرات والنيل کل من انهار الجنة-
[ ] জান্নাতের ঝর্ণা
পবিত্র কুরআনে জান্নাতের অনেকগুলো ঝর্ণার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন-
সালসাবিল - যা থেকে আদা মিশ্রিত স্বাদ আসবে।
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا
عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا
সেখানে পান করতে দেওয়া হবে আদা মিশ্রিত পাণীয়। জান্নাতের এমন এক ঝর্ণার যার নাম সালসাবিল (দাহর ১৭-১৮)
কাফুর- যা পানে জান্নাতীরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا
নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে কাফুর মিশ্রিত পানপাত্র। এটা একটা ঝরণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে-তারা একে প্রবাহিত করবে। (দাহর ৫-৬)
তাসনীম- যার স্বচ্ছ পানি আল্লাহর বিশেষ বান্দাহদের পান করার জন্য দেওয়া হবে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ
عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ
يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ
خِتَامُهُ مِسْكٌ وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ
وَمِزَاجُهُ مِن تَسْنِيمٍ
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ
নিশ্চয় সৎলোকগণ থাকবে পরম আরামে, সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে। আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন।তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।তার মোহর হবে কস্তুরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি। এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীলগণ। (মুতাফফিফীন ২২-২৮)
উল্লেখিত ঝর্ণা সমূহ ছাড়াও জান্নাতীদের আরামের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের আরো ঝর্ণা থাকবে। যা কুরআনের সূরা দুখানের (৫১,৫২) এবং মুরসালাতের (৪১,৪২) নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
[ ] জান্নাতে হাউজে কাওছার
হাউজে কাউসারের পানি পান করানোর দায়িত্ব স্বয়ং রাসূল (স) পালন করবেন। হাউজে কাউসারের প্রশস্ততা মদীনা থেকে আম্মানের দূরত্বের সমান। ( প্রায় ১ হাজার কিমি) এর পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধূর চেয়ে মিষ্টি। (সাওবান রা. - মুসলিম)
কিয়ামতের দিন রাসূল (স) এর মিম্বার হাউজে কাউসারের পাশে রাখা হবে। তার ওপর আরোহন করে তিনি তার উম্মতদেরকে পানি পান করাবেন। (আবু হুরায়রা - বুখারী)
যে ব্যক্তি একবার হাউজে কাউসারের পানি পান করবে তার আর কখনো পানি পিপাসা হবেনা ( আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের পোশাক ও অলংকার
জান্নাতীরা পাতলা ও মোটা সবুজ রেশমের কাপড় পরিধান করবে। এবং হাতে সোনার অলংকার ব্যবহার করবে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا
وْلَئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়। (কাহফ ৩০-৩১)
খাটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাটি সোনার অলংকার, খাটি মোতির অলংকার, এবং মোতি মিশ্রিত সোনার অলংকারও জান্নাতীরা ব্যবহার করবে।
إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন উদ্যান সমূহে, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তাদেরকে তথায় স্বর্ণ-কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক হবে রেশমী। (হাজ্জ-২৩)
[ ] জান্নাতের রমনী
জান্নাতী রমনীদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاء
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا
عُرُبًا أَتْرَابًا
لِّأَصْحَابِ الْيَمِينِ
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা। ডান দিকের লোকদের জন্যে। (ওয়াকিয়া ৩৫-৩৮)
জান্নাতী রমনীগন সকল প্রকার প্রকাশ্য দোষত্রুটি (হায়েজ, নেফাস) এবং অপ্রকাশ্য দোষত্রুটি (রাগ, হিংসা ইত্যাদি) মুক্ত হবে।
وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে। (বাকারা-২৫)
তাবরানীতে উম্মে সালমা (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে জান্নাতে প্রবেশকারী নারীরা মর্যাদার দিক থেকে হুরদের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান হবে।
এছাড়াও অসংখ্য হাদীসে জান্নাতী রমনীদের গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত রয়েছে।
[ ] জান্নাতের বৈঠকখানা
জান্নাতের সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় বৈঠকখানা সম্পর্কে পবিত্র অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
জান্নাতীরা ঘন ছায়াময় স্থানে মসনদ স্থাপন করে স্বীয় স্ত্রীদের সাথে আনন্দময় আলাপচারিতায় মেতে উঠবে।
إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ
هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِؤُونَ
এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে। (ইয়াসিন ৫৫-৫৬)
জান্নাতীরা সামনাসামনি রাখা খুব সুন্দর খাটে বসবে।
مُتَّكِئِينَ عَلَى سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ
তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব। (তুর-২০)
এছাড়াও সূরা ওয়াকিয়ার ১০-১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে - জান্নাতীরা সোনা, চাদি ও জাওহারের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি আসন সমূহে পরস্পরের সামনে বসে সুরা পাত্র পানের আগ্রহ প্রকাশ করবে।
[ ] জান্নাতে জান্নাতীদের অবস্থা কেমন হবে
জান্নাতে জান্নাতীদের সবচেয়ে বড় সফলতা হবে আল্লাহর দিদার লাভ করা।
আল্লাহর দিদার লাভের সময় জান্নাতের চেহারা খুশীতে উজ্জল হয়ে যাবে।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ
إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তার পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। (কিয়ামাহ ২২-২৩)
অতএব এমন সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় স্থান তথা জান্নাতে স্থান লাভ করার জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ ও রাসূল (স) এর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালন করতে হবে।
আল্লাহ আমদেরকে সৎকর্মশীল ও জান্নাত অনুগামী বান্দাহ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
[ ] জান্নাত’ শব্দের অর্থ- বাগান, পার্ক, গার্ডেন, উদ্যান ইত্যাদি। আরবিতে বাগানকে ‘রওজা’ এবং ‘হাদিকা’ও বলা হয়। কিন্তু জান্নাত শব্দটি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব একটি পরিভাষা। যার মৌলিক অর্থ গোপন বা আবৃত থাকা। বাগান যেহেতু গাছপালা দ্বারা আবৃত থাকে তাই বাগানকে জান্নাত বলা হয়।
[ ] জান্নাতের অস্তিত্বের প্রমাণঃ
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন- যখন রমজানের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শীকলবদ্ধ করা হয়। (মুসলিম)
ইবনে ওমর (রা)............... ' যখন তোমাদের কোন লোক মৃত্যু বরন করে তখন সকাল সন্ধা তার ঠিকানা তার সামনে পেশ করা হয়। যদি জান্নাতী হয় জান্নাত আর জাহান্নামী হলে জাহান্নাম (দেখানো হয়)।। (বোখারী)
[ ] জান্নাতের নামসমূহঃ
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে জান্নাতের আটটি নাম বর্নিত হয়েছে। যেমন -
১. জান্নাতুল ফেরদাউস
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
'তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে'। (মুমিনুন-১১)
২.জান্নাতুন নাঈম (নেয়ামত ভরা জান্নাত)
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ
মোত্তাকীদের জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে নেয়ামতের জান্নাত। (কলম-৩৪)
৩. জান্নাতুল মাওয়া
أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত। (সেজদাহ-১৯)
৪. জান্নাতু আদন
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَآؤُونَ كَذَلِكَ يَجْزِي اللّهُ الْمُتَّقِينَ
সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয় তাদের জন্যে তাতে তা-ই রয়েছে, যা তারা চায় এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহর পরহেযগারদেরকে। (নাহল-৩১)
৫. দারুস সালাম (নিরাপত্তার ঘর)
وَاللّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلاَمِ وَيَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
আর আল্লাহ শান্তি-নিরাপত্তার আলয়ের প্রতি আহবান জানান এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথ প্রদর্শন করেন। (ইউনুস-২৫)
৬. দারুল খুলদ
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ ذَلِكَ يَوْمُ الْخُلُودِ
তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন। (ক্বাফ-৩৪)
৭.দারুল মাকাম
الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ
যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন, তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি। (ফাতির-৩৫)
৮. দারুল কারার
وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ। (মুমিন-৩৯)
[ ] জান্নাতের সীমা-পরিসীমা ও প্রশস্ততা
وَسَارِعُواْ إِلَى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। (ইমরান-১৩৩)
জান্নাত এত সুবিশাল যে, হাদীসে রয়েছে- 'সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারীকে এই দুনিয়ার চেয়ে দশগুন বড় জান্নাত দেওয়া হবে।' (মুসলিম)
সর্বশেষ ব্যক্তিকে এতটুকু স্থান দেওয়ার পরেও জান্নাতে এত স্থান বাকী থেকে যাবে যে, তা পরিপূর্ণ করার জন্য আল্লাহ অন্য এক মাখলুখ সৃষ্টি করবেন। (মুসলিম)
'জান্নাতের বৃক্ষসমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (স) বলেন, জান্নাতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে, কোন অশ্বারোহী তার ছায়ায় শত বছর চলার পরেও সে ছায়া শেষ হবে না'। (বোখারী)
[ ] জান্নাতের দরজা
জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন ফেরেশতারা দরজা খুলে দেবে এবং নিরাপত্তা ও সংবর্ধনা দিবে।
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاؤُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
'যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর'। (যুমার-৭৩)
জান্নাতের দরজা সর্বপ্রথম উম্মুক্ত করা হবে রাসূল (স) এর জন্য। (আনাস ইবনে মালিক- মুসলিম)
জান্নাতের দরজা - ৮টি
1. রাইয়ান - যা দিয়ে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। (বোখারী)
2. বাবুস সালা - যা দিয়ে নামাজীরা প্রবেশ করবে।
3. বাবুল জিহাদ- যা দিয়ে জিহাদকারীরা প্রবেশ করবে।
4. বাবুস সাদাকাহ- যা দিয়ে দান খয়রাত কারী ব্যক্তিকে ডাকা হবে।
5. বাবু আয়মান- বিনা হিসেবে যারা জান্নাতী তাদেরকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো হবে।
6. বাবু আল কাজিমিনাল গাইজ, ওয়াল আফিনা আনিন্নাস - রাগকে দমনকারী ও অন্যকে ক্ষমাকারীর দরজা
7. বাবু আর রাজিয়িন- সন্তুষ্টদের দরজা
8. বাবু আত তাওবা - ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের দরজা
[ ] জান্নাতের স্তর
'জান্নাতের শত স্তর রয়েছে, আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে রয়েছে শতবছরের রাস্তার দূরত্ব'। (আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্থান ওয়াসীলা - যা শুধুমাত্র রাসূল (স) ই পাবেন। (মুসনাদ আহমদ)
জান্নাতের উন্নত স্থানসমূহ জান্নাতীদের স্তর অনুযায়ী উচু নিচু হয়।
لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللَّهِ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ
'কিন্তু যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্যে নির্মিত রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ। এগুলোর তলদেশে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না'। (যুমার-২০)
[ ] জান্নাতের অট্টালিকা
'জান্নাতের একটি ইট রুপার, আরেকটি ইট হবে স্বর্ণের। তার সিমেন্ট সুগন্ধিযুক্ত মিশকে আম্বরের। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের'। (আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
'জান্নাতের অট্টালিকা সমূহে সমস্ত প্লেট হবে সোনা রুপার, অট্টালিকা সমূহে সর্বদা চন্দন কাঠ জ্বলতে থাকবে যার কারনে অট্টলিকা সমূহ সর্বদা সুগন্ধিযুক্ত থাকবে, জান্নাতীদের ঘাম থেকে মেশকে আম্বরের গ্রান আসবে'। (আবু হুরাইরা -বুখারী)
জান্নাতের এসব অট্টালিকা সকল প্রকার ছোট বড় নাপাকী এবং ময়লা আবর্জনা থেকে পবিত্র থাকবে।
وَعَدَ اللّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
'আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনে কানন-কুঞ্জের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণ। তারা সে গুলোরই মাঝে থাকবে। আর এসব কানন-কুঞ্জে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুতঃ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হল মহান কৃতকার্যতা'। (তাওবা-৭২)
[ ] জান্নাতের তাবুঃ
প্রত্যেক জান্নাতীর অট্টালিকায় তাবু থাকবে যেখানে জান্নাতীরা অবস্থান করবে।
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৭২,৭৩)
জান্নাতের প্রতিটি তাবু ৬০ মাইল প্রশস্ত হবে। এসব তাবুতে জান্নাতীদের স্ত্রীরা অবস্থান করবে, যারা সর্বদায় তাদের স্বামীদের জন্য অপেক্ষমান থাকবে। ( আব্দুল্লাহ বিন কায়েস- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের বাজার
জান্নাতে প্রত্যেক জুমার দিন বাজার জমবে, জুমার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী জান্নাতীদের সৌন্দর্য পূর্ব থেকে বেশি হবে, মহিলারা বাজারে উপস্থিত হবে না এমনিতে ঘরে বসে থাকা অবস্থাই আল্লাহ তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দিবেন। (আনাস ইবনে মালিক- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের বৃক্ষ
জান্নাতে সকল প্রকারের ফলের গাছ থাকবে, তবে খেজুর, আনার, আঙ্গুরের গাছ বেশি থাকবে।
فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
তথায় আছে ফল-মূল, খর্জুর ও আনার। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৬৮,৬৯)
জান্নাতের বৃক্ষগুলোর শাখা সমূহ শষ্য শ্যামল, লম্বা ও ঘন হবে।
ذَوَاتَا أَفْنَانٍ
فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
উভয় উদ্যানই ঘন শাখা-পল্লববিশিষ্ট।
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান- ৪৮,৪৯)
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ।
فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ।
وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ।
وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ।
وَمَاء مَّسْكُوبٍ।
وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ।
যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান। তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে। কাদি ভরা কলা বৃক্ষ, সম্প্রসারিত ছায়া। সাদা প্রবাহ পানি ও প্রচুর ফলমুল। (ওয়াকিয়া, ২৭-৩২)
জান্নাতের সকল বৃক্ষের মূল হবে স্বর্ণের
ما فی الجنة شجرة الا ساقها من ذهب
(আবু হুরায়রা- তিরমিজী)
[ ] জান্নাতের খানা পিনা
জান্নাতের প্রথম খাবার হবে মাছ, এরপর পরবর্তী খাবার হবে গরুর গোশত। জান্নাতের প্রথম পানীয় হবে সালসাবীল কুপের পানি ( সাওবান রা. - মুসলিম)
[ ] জান্নাতের ফল
জান্নাতে জান্নাতীদের পছন্দমতো ফলমূল মজুদ থাকবে।
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ
وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنينَ
নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে। এবং তাদের বাঞ্ছিত ফল-মূলের মধ্যে।বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (মুরসালাত ৪১-৪৪)
জান্নাতীরা যখন খুশী এবং যেভাবে ইচ্ছা ফল ভক্ষন করতে পারবে।
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا
তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে। (দাহর-১৪)
জান্নাতের একটি ফলের শীষ যদি পৃথিবীতে আসতো, তাহলে আসমান ও জমীনের সকল মাখলুক তা খেয়ে শেষ করতে পারতো মা। (যাবের (রা)- আহমদ)
[ ] জান্নাতের নদী
পবিত্র কুরআনে ৪ ধরনের প্রবাহমান পানির নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব নদীসিমূহের পানীয়র রং ও স্বাদ সর্বদা একইরকম থাকবে।
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى
পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। (মুহাম্মদ -১৫)
এছাড়াও আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত মুসলিম শরিফের এক হাদীসে সাইহান, জাইহান, ফোরাত ও নীল কে জান্নাতের নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
سيحان وجيحان والفرات والنيل کل من انهار الجنة-
[ ] জান্নাতের ঝর্ণা
পবিত্র কুরআনে জান্নাতের অনেকগুলো ঝর্ণার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন-
সালসাবিল - যা থেকে আদা মিশ্রিত স্বাদ আসবে।
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا
عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا
সেখানে পান করতে দেওয়া হবে আদা মিশ্রিত পাণীয়। জান্নাতের এমন এক ঝর্ণার যার নাম সালসাবিল (দাহর ১৭-১৮)
কাফুর- যা পানে জান্নাতীরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا
নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে কাফুর মিশ্রিত পানপাত্র। এটা একটা ঝরণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে-তারা একে প্রবাহিত করবে। (দাহর ৫-৬)
তাসনীম- যার স্বচ্ছ পানি আল্লাহর বিশেষ বান্দাহদের পান করার জন্য দেওয়া হবে।
إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ
عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ
يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ
خِتَامُهُ مِسْكٌ وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ
وَمِزَاجُهُ مِن تَسْنِيمٍ
عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ
নিশ্চয় সৎলোকগণ থাকবে পরম আরামে, সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে। আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন।তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।তার মোহর হবে কস্তুরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি। এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীলগণ। (মুতাফফিফীন ২২-২৮)
উল্লেখিত ঝর্ণা সমূহ ছাড়াও জান্নাতীদের আরামের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের আরো ঝর্ণা থাকবে। যা কুরআনের সূরা দুখানের (৫১,৫২) এবং মুরসালাতের (৪১,৪২) নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
[ ] জান্নাতে হাউজে কাওছার
হাউজে কাউসারের পানি পান করানোর দায়িত্ব স্বয়ং রাসূল (স) পালন করবেন। হাউজে কাউসারের প্রশস্ততা মদীনা থেকে আম্মানের দূরত্বের সমান। ( প্রায় ১ হাজার কিমি) এর পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধূর চেয়ে মিষ্টি। (সাওবান রা. - মুসলিম)
কিয়ামতের দিন রাসূল (স) এর মিম্বার হাউজে কাউসারের পাশে রাখা হবে। তার ওপর আরোহন করে তিনি তার উম্মতদেরকে পানি পান করাবেন। (আবু হুরায়রা - বুখারী)
যে ব্যক্তি একবার হাউজে কাউসারের পানি পান করবে তার আর কখনো পানি পিপাসা হবেনা ( আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর- মুসলিম)
[ ] জান্নাতের পোশাক ও অলংকার
জান্নাতীরা পাতলা ও মোটা সবুজ রেশমের কাপড় পরিধান করবে। এবং হাতে সোনার অলংকার ব্যবহার করবে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا
وْلَئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়। (কাহফ ৩০-৩১)
খাটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাটি সোনার অলংকার, খাটি মোতির অলংকার, এবং মোতি মিশ্রিত সোনার অলংকারও জান্নাতীরা ব্যবহার করবে।
إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন উদ্যান সমূহে, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তাদেরকে তথায় স্বর্ণ-কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক হবে রেশমী। (হাজ্জ-২৩)
[ ] জান্নাতের রমনী
জান্নাতী রমনীদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاء
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا
عُرُبًا أَتْرَابًا
لِّأَصْحَابِ الْيَمِينِ
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা। ডান দিকের লোকদের জন্যে। (ওয়াকিয়া ৩৫-৩৮)
জান্নাতী রমনীগন সকল প্রকার প্রকাশ্য দোষত্রুটি (হায়েজ, নেফাস) এবং অপ্রকাশ্য দোষত্রুটি (রাগ, হিংসা ইত্যাদি) মুক্ত হবে।
وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে। (বাকারা-২৫)
তাবরানীতে উম্মে সালমা (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে জান্নাতে প্রবেশকারী নারীরা মর্যাদার দিক থেকে হুরদের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান হবে।
এছাড়াও অসংখ্য হাদীসে জান্নাতী রমনীদের গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত রয়েছে।
[ ] জান্নাতের বৈঠকখানা
জান্নাতের সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় বৈঠকখানা সম্পর্কে পবিত্র অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
জান্নাতীরা ঘন ছায়াময় স্থানে মসনদ স্থাপন করে স্বীয় স্ত্রীদের সাথে আনন্দময় আলাপচারিতায় মেতে উঠবে।
إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ
هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِؤُونَ
এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে। (ইয়াসিন ৫৫-৫৬)
জান্নাতীরা সামনাসামনি রাখা খুব সুন্দর খাটে বসবে।
مُتَّكِئِينَ عَلَى سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ
তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব। (তুর-২০)
এছাড়াও সূরা ওয়াকিয়ার ১০-১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে - জান্নাতীরা সোনা, চাদি ও জাওহারের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি আসন সমূহে পরস্পরের সামনে বসে সুরা পাত্র পানের আগ্রহ প্রকাশ করবে।
[ ] জান্নাতে জান্নাতীদের অবস্থা কেমন হবে
জান্নাতে জান্নাতীদের সবচেয়ে বড় সফলতা হবে আল্লাহর দিদার লাভ করা।
আল্লাহর দিদার লাভের সময় জান্নাতের চেহারা খুশীতে উজ্জল হয়ে যাবে।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ
إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তার পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। (কিয়ামাহ ২২-২৩)
অতএব এমন সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় স্থান তথা জান্নাতে স্থান লাভ করার জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ ও রাসূল (স) এর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালন করতে হবে।
আল্লাহ আমদেরকে সৎকর্মশীল ও জান্নাত অনুগামী বান্দাহ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল
ব্লগার ও লেখক
Comments
Post a Comment