মাহে রমজানের গুরুত্ব, করণীয় ও ফজীলত| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল
বিষয়ঃ মাহে রমজানের গুরুত্ব, করণীয় ও ফজীলত
রহমত, মাগফেরাত ও মুক্তির সাওগাত নিয়ে প্রতি বছর মুমিন জীবনে ফিরে আসে মাহে রমজান। রমজান মাসটি মুমিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল পাপ, পংকিলতা থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে নিজেকে মহান রবের একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে মাহে রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। মাহে রমজানে একমাস সিয়াম সাধনা করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নর-নারীর ওপর ফরজ। এ ফরজ যথাযথভাবে পালনে রয়েছে মহান রবের সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি, একইসাথে লংঘন কারীর জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
মূলত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, কামনা বাসনা থেকে বিরত থাকা এবং নির্দিষ্ট শর্তাবলী পালন করার নামই সিয়াম বা রোজা।
[ ] মাহে রজানের গুরুত্বঃ
মাহে রমজান তথা রমজান মাসের রোজা প্রত্যেক সুস্থ, স্বাধীন প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষের ওপর ফরজ। রোজা দ্বীনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের নির্দেশে বলেন-
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।" (বাকারা-১৮৩)
রাসূল (স) বলেন- দ্বীনের খুটি বা স্তম্ভ হলো পাচটি ; ইমান, সালাত, যাকাত, হজ্জ, সাওম।
তাই যারাই রমজানে উপনীত হবে তাদেরকে অবশ্যই রমজানের পুরো মাস রোজা রাখতে হবে। এটিই ইসলামের বিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡكُمُ الشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُؕ
"কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য ।" (বাকারা-১৮৭)
এমন মহিমান্বিত মাসে বরকতময় এই ইবাদত থেকে শুধুমাত্র হতভাগারাই দূরে থাকতে পারে। যারা বিনা ওজরে রমজানের রোজা পরিত্যাগ করবে তাদের ব্যাপারে বলে হচ্ছে-
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গলাটি ফাড়া এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)
‘যে ব্যক্তি এ মুবারক মাসেও (রমজান মাসে) আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না সে বড়ই দুর্ভাগা।’ (ইবনে হিববান)
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন, " যে ব্যক্তি রমজান মাসে বিনা ওজরে একদিন সিয়াম ভঙ্গ করে সে সারাজীবন সিয়াম রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।" ( তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
পক্ষান্তরে যারা ইমানের সাথে রোজা পূর্ণ করবে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন, তার উম্মতকে রমজান মাসের শেষ রাতে মাফ করে দেওয়া হয়। নিবেদন করা হলো, হে আল্লার রাসূল (স) সেটা কি কদরের রাত? তিনি বললেন, না। বরং আমলকারী যখন নিজের আমল শেষ করে তখনই তার বিনিময় তাকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ)
রাসূল (স) বলেন, "যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জ্বীনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটিও খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, যার একটিও বন্ধ করা হয় না। এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তি! অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মপরায়ন ব্যক্তি! থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানে) প্রতিটি রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন।" (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
[ ] রমজানের সিয়াম সাধনায় করণীয়ঃ
ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ অনুসরণ না করলে তা কোন কাজে আসে না। সেজন্য বরকতময় রমজানে মুমিনের উচিৎ তার করণীয় সম্পর্কে সজাগ থাকা। অন্যথায় নাজাত লাভের বিপরীতে বঞ্চিত ও গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
রমজানে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো-
• রমজানের সকল ফরজ ওয়াজিব যথাযথভাবে পালন করা।
• ফরজ সালাত ত্যাগ না করা।
• তারাবী ও তাহাজ্জুদ আদায় করা।
• তাকওয়ার পথ অবলম্বন করা।
• বেশি বেশী কুরআন অধ্যয়ন করা।
• বেশি বেশি ইস্তেগফার ও তাসবীহ পড়া।
• অধিক পরিমানে দান সাদকা করা।
• হারাম ভক্ষন না করা।
• সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
• পরস্পর ঝগড়া, গালমন্দ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
রমজানের সাধারণ কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ করে রাসূল (স) বলেন -
"যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদানুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারলো না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ তথা রোজা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই"। (বুখারী)
"রোজা ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ কোনদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন কোন খারাপ কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে বা বিবাদে প্ররোচিত করতে চাই সে যেন বলে আমি রোজাদার। (আবু হুরায়রা বর্ণিত, মুত্তাফাকুন আলাইহি)
[ ] মাহে রমজানের ফজীলত
মাহে রমজানের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন-
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন,"যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহরাশি মাফ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় ইবাদাতে রাত কাটাবে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে 'ইবাদতে কাটাবে' তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। ( বুখারী, মুসলিম)
রাসূল (স) বলেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার মুখমন্ডল জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
রাসূল (স) বলেন- বেহেশতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। যা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারদেরই প্রবেশের সুযোগ থাকবে৷ অন্য কেউ সে সুযোগ পাবে না। ( মুত্তাফাকুন আলাইহি)
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন- সাধারণত বান্দাহর নেক আমলের সাওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন রোজা এর বিপরীত। 'রোজা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।' (বুখারী)
পরকালে মাহে রমজানের সিয়াম পালনকারীরা সৌভাগ্যবান হবে। তাদের জন্য রোজা ও কুরআন আলাদা আলাদাভাবে সুপারিশ করবে।
"রোজা বলবে হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে পানাহার ও অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহন করবেন। ( বাইহাকী, শুয়াবুল ইমান)
এমাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা অন্য সকল রাতের চেয়ে উত্তম, একে ভাগ্য রজনী তথা কদরের রাত বলা হয়। এই রাতেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে।
আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, রমজান মাস শুরু হলে রাসূল (স) বললেন, তোমাদের নিকট এমাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়। (সুনানু ইবনে মাজাহ)
এ মাসের ইবাদতকে আরো বরকতময় ও কদরের রজনীকে তালাশের উদ্দেশ্যে শেষ দশকে ইতেকাফের নির্দেশ রয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "রাসূল (স) প্রতি বছর (রমজানে) ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। তবে ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন।" (বুখারী, তিরমিজি)
এইচ. এম নূর আলম ফয়সাল
লেখক ও ব্লগার
২৪/০৪/২০২০
রহমত, মাগফেরাত ও মুক্তির সাওগাত নিয়ে প্রতি বছর মুমিন জীবনে ফিরে আসে মাহে রমজান। রমজান মাসটি মুমিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল পাপ, পংকিলতা থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে নিজেকে মহান রবের একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে মাহে রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। মাহে রমজানে একমাস সিয়াম সাধনা করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নর-নারীর ওপর ফরজ। এ ফরজ যথাযথভাবে পালনে রয়েছে মহান রবের সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি, একইসাথে লংঘন কারীর জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
মূলত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, কামনা বাসনা থেকে বিরত থাকা এবং নির্দিষ্ট শর্তাবলী পালন করার নামই সিয়াম বা রোজা।
[ ] মাহে রজানের গুরুত্বঃ
মাহে রমজান তথা রমজান মাসের রোজা প্রত্যেক সুস্থ, স্বাধীন প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষের ওপর ফরজ। রোজা দ্বীনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের নির্দেশে বলেন-
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।" (বাকারা-১৮৩)
রাসূল (স) বলেন- দ্বীনের খুটি বা স্তম্ভ হলো পাচটি ; ইমান, সালাত, যাকাত, হজ্জ, সাওম।
তাই যারাই রমজানে উপনীত হবে তাদেরকে অবশ্যই রমজানের পুরো মাস রোজা রাখতে হবে। এটিই ইসলামের বিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡكُمُ الشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُؕ
"কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য ।" (বাকারা-১৮৭)
এমন মহিমান্বিত মাসে বরকতময় এই ইবাদত থেকে শুধুমাত্র হতভাগারাই দূরে থাকতে পারে। যারা বিনা ওজরে রমজানের রোজা পরিত্যাগ করবে তাদের ব্যাপারে বলে হচ্ছে-
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গলাটি ফাড়া এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)
‘যে ব্যক্তি এ মুবারক মাসেও (রমজান মাসে) আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না সে বড়ই দুর্ভাগা।’ (ইবনে হিববান)
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন, " যে ব্যক্তি রমজান মাসে বিনা ওজরে একদিন সিয়াম ভঙ্গ করে সে সারাজীবন সিয়াম রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।" ( তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
পক্ষান্তরে যারা ইমানের সাথে রোজা পূর্ণ করবে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন, তার উম্মতকে রমজান মাসের শেষ রাতে মাফ করে দেওয়া হয়। নিবেদন করা হলো, হে আল্লার রাসূল (স) সেটা কি কদরের রাত? তিনি বললেন, না। বরং আমলকারী যখন নিজের আমল শেষ করে তখনই তার বিনিময় তাকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ)
রাসূল (স) বলেন, "যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জ্বীনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটিও খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, যার একটিও বন্ধ করা হয় না। এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তি! অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মপরায়ন ব্যক্তি! থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানে) প্রতিটি রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন।" (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
[ ] রমজানের সিয়াম সাধনায় করণীয়ঃ
ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ অনুসরণ না করলে তা কোন কাজে আসে না। সেজন্য বরকতময় রমজানে মুমিনের উচিৎ তার করণীয় সম্পর্কে সজাগ থাকা। অন্যথায় নাজাত লাভের বিপরীতে বঞ্চিত ও গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
রমজানে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো-
• রমজানের সকল ফরজ ওয়াজিব যথাযথভাবে পালন করা।
• ফরজ সালাত ত্যাগ না করা।
• তারাবী ও তাহাজ্জুদ আদায় করা।
• তাকওয়ার পথ অবলম্বন করা।
• বেশি বেশী কুরআন অধ্যয়ন করা।
• বেশি বেশি ইস্তেগফার ও তাসবীহ পড়া।
• অধিক পরিমানে দান সাদকা করা।
• হারাম ভক্ষন না করা।
• সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
• পরস্পর ঝগড়া, গালমন্দ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
রমজানের সাধারণ কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ করে রাসূল (স) বলেন -
"যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদানুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারলো না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ তথা রোজা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই"। (বুখারী)
"রোজা ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ কোনদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন কোন খারাপ কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে বা বিবাদে প্ররোচিত করতে চাই সে যেন বলে আমি রোজাদার। (আবু হুরায়রা বর্ণিত, মুত্তাফাকুন আলাইহি)
[ ] মাহে রমজানের ফজীলত
মাহে রমজানের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন-
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন,"যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহরাশি মাফ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় ইবাদাতে রাত কাটাবে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে 'ইবাদতে কাটাবে' তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। ( বুখারী, মুসলিম)
রাসূল (স) বলেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার মুখমন্ডল জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
রাসূল (স) বলেন- বেহেশতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। যা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারদেরই প্রবেশের সুযোগ থাকবে৷ অন্য কেউ সে সুযোগ পাবে না। ( মুত্তাফাকুন আলাইহি)
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (স) বলেন- সাধারণত বান্দাহর নেক আমলের সাওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন রোজা এর বিপরীত। 'রোজা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।' (বুখারী)
পরকালে মাহে রমজানের সিয়াম পালনকারীরা সৌভাগ্যবান হবে। তাদের জন্য রোজা ও কুরআন আলাদা আলাদাভাবে সুপারিশ করবে।
"রোজা বলবে হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে পানাহার ও অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহন করবেন। ( বাইহাকী, শুয়াবুল ইমান)
এমাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা অন্য সকল রাতের চেয়ে উত্তম, একে ভাগ্য রজনী তথা কদরের রাত বলা হয়। এই রাতেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে।
আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, রমজান মাস শুরু হলে রাসূল (স) বললেন, তোমাদের নিকট এমাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়। (সুনানু ইবনে মাজাহ)
এ মাসের ইবাদতকে আরো বরকতময় ও কদরের রজনীকে তালাশের উদ্দেশ্যে শেষ দশকে ইতেকাফের নির্দেশ রয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "রাসূল (স) প্রতি বছর (রমজানে) ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। তবে ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন।" (বুখারী, তিরমিজি)
এইচ. এম নূর আলম ফয়সাল
লেখক ও ব্লগার
২৪/০৪/২০২০
Comments
Post a Comment