রোজার ব্যক্তিগত ও সামাজিক উপকারিতা|| এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল

বিষয়ঃ রোজার ব্যক্তিগত ও সামাজিক উপকারিতা। 

রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। প্রত্যেক স্বাধীন ও সুস্থ প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের ওপর রমজানের এক মাস রোজা রাখা ফরজ। বিনা ওজরে রমজানের একটি রোজাও ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক গুনাহ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। তবে রোজার রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। রোজা পালনের মাধ্যমে রমজানের একটি মাস মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমাজ জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। নিম্মে সংক্ষিপ্ত আকারে রোজার উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।

★ রোজার মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জিত হয়। এটি ব্যক্তি জীবনে রোজার মাধ্যমে পাওয়া সবচেয়ে বড় উপকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন-  يٰٓاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।" (বাকারা-১৮৩)

★ রোজার মাধ্যমে মহান প্রভুর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। যেমন হাদীসে কুদসীয়ে রয়েছে, আল্লাহ বলেন- 
الصوم لي وانااجزي به- 
অর্থাৎ 'রোজা আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেবো'। 

★ রোজার মাধ্যমে মহান রবের অফুরন্ত রহমত লাভ করা যায়। যেমন হাদীসে রয়েছে- 
فتحت ابواب الرحمة- 
অর্থাৎ 'রমজানে আল্লাহর অবারিত রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়'। (সহীহ মুসলিম) 

★ রোজা জান্নাতে প্রবেশের এক উত্তম মাধ্যম। 
রাসূল (স) বলেন- বেহেশতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। যা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারদেরই প্রবেশের সুযোগ থাকবে৷ অন্য কেউ সে সুযোগ পাবে না। ( মুত্তাফাকুন আলাইহি) 

★ রোজা জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। যেমন হাদীসে রয়েছে- 
غلقت ابواب جهنم -
অর্থাৎ " রমজানে জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়'। (সহীহ মুসলিম) 

★ রোজা পালনের মাধ্যমে অতীতের গুনাহ সমূহ থেকে ক্ষমা লাভ করা যায়। রাসূল (স) বলেন,"যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহরাশি মাফ করা হবে। (মুত্তাফাকুন আলাইহি) 

★ কুরআন নাজিলের মাস রমজান। আর এই রোজার মাধ্যমে কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মানের প্রেরণা পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
 شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِىۡٓ اُنۡزِلَ فِيۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰى وَالۡفُرۡقَان‌ِۚ-
অর্থাৎ রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। (বাকারা-১৮৫) 

★রোজার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য্য, সহিঞ্চুতা ও নম্র স্বভাবের গুনে গুনান্বিত হওয়া যায়। 
★আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত করে।
★ রোজা শয়তানের যাবতীয় আক্রমনের বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ হাতিয়ারের কাজ করে।
★ রোজা দ্বারা ব্যক্তির চরিত্র বিধ্বংসী কুপ্রবৃত্তি দমন হয়।
★রোজা দ্বারা ব্যক্তির মানসিক ও শারিরীক সকল অশ্লীল চাহিদা অবধমিত হয়।
★ রোজা দ্বারা অন্তরের যাবতীয় মলিনতা ও কুটিলতা দূর হয়।
★ রোজা ব্যক্তিকে যাবতীয় অবাঞ্ছিত কাজ হতে বিরত থাকতে অভ্যস্ত করে তুলে।
★ রোজার মাধ্যমে ব্যক্তি কুপ্রবৃত্তি ও প্রলোভনের ওপর বিজয়ী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয়।
★ রোজার কারনে ক্ষুধার অনুভূতি ধনীর অন্তরে দরিদ্রের জন্য সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং দরিদ্রকে সাহায্য করার মানসিকতা সৃষ্টি করে। 
★রোজা বিশ্ব মুসলিম সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে। 
★ বিভিন্ন রোগ জীবানু ধ্বংস ও শারীরিক সুস্থতা আনয়ন করে।
★ রোজা মানুষকে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায়ে যোগ্য করে তোলে।

সর্বোপরি, রমজান মাস একজন মুমিনের জন্য আকীদা, ইবাদত, উত্তম নৈতিকতা, মানবতাবোধ, পরকাল ইত্যাদির সর্বোত্তম প্রশিক্ষণের প্রধান মাধ্যমে হিসেবেই বিবেচিত হয়। রমজান মাসের এই প্রশিক্ষণ সারাবছর ব্যাপী অব্যাহত রাখতে পারলে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচীত হবে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে কোন প্রকার পাপ, পংকিলতা ও অশ্লীলতা যেমন থাকবে না। একইসাথে সমাজিক বিবেদ, হিংসা, উশৃংখলতা, অন্যায়-অনাচার, সুদ, ঘুষ ইত্যাদিও থাকবে না। যেকোন সময়ের রোজা মানুষের জন্য উপরোক্ত উপকার বহন করবে বিশেষত রমজান মাস।

তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিৎ রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের পরিবর্তন আনয়নের চেষ্টা করা। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পরকালীন নাজাতের সর্বাত্বক প্রচেষ্টা করা।

Comments

Post a Comment

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ