কুরআন হাদীসের আলোকে চোর ও ধোঁকাবাজ নেতাদের শেষ ঠিকানা

 কুরআন হাদীসের আলোকে চোর ও ধোঁকাবাজ নেতাদের শেষ ঠিকানাঃঃ 


নেতা মানেই চোর, ধোঁকাবাজ ইত্যাদি বিশেষনে বিশেষাায়িত এমনই একটি ট্রেন্ড বর্তমান সময়ে প্রচলিত রয়েছে এবং অনেকাংশেই তা বাস্তব। শাসক বা নেতা শ্রেণীর মানুষদের জন্মই যেন চুরি আর ধোঁকাবাজির জন্য। আর যারা এর প্রতিবাদ করবে তাদের ওপর চলবে অত্যাচার। এসকল নেতাদের চরিত্র এতই খারাপ যে, গরীব অসহায় শ্রেণীর মানুষের অধিকার ও সম্পদ লুন্ঠন করতেও এরা দ্বিধা করে না। সরকারের বাজেট থেকে শুরু করে সকল স্তরেই অনেক নেতা ও শাসক চুরি ও ধোঁকাবাজিতে লিপ্ত। এরা প্রতিনিয়তই নেতৃত্বের নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনা (ধোঁকাবাজি) করে যাচ্ছে।

কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা অনুযায়ী চোর, ধোঁকাবাজ ও অত্যাচারী শাসক বা নেতাদের ঠিকানা জাহান্নাম। নিম্মে কুরআন হাদীসের আলোকে এদের অবস্থা বর্ণনা করা হলো।

অন্যের মালিকানাধীন অথবা অন্যের অধিকার আছে এমন সম্পত্তি অবৈধভাবে হরন করা বা খেয়ে ফেলা অন্যায়।

যেকোন ধরনের চুরি বা আত্মসাতের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡكُلُوۡۤا اَمۡوٰلَكُمۡ بَيۡنَكُمۡ بِالۡبَاطِلِ 
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না। (নিসা-২৯) 

যেসকল নেতা জোর করে অন্যের সম্পত্তি দখল করে অথবা রাস্ট্রীয় কোষাগার থেকে সাধারনের জন্য বাজেট হওয়া সম্পদ বা খাদ্য ধোঁকা দিয়ে নিজেই খেয়ে ফেলে তাদের জন্য দুনিয়াতেই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

 وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَيۡدِيَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عَزِيۡزٌ حَكِيۡمٌ
চোর-পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আল্লাহর শক্তি সবার ওপর বিজয়ী এবং তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। (মায়েদা-৩৮) 

চোরদের অভিশম্পাত করে রাসূল (স) বলেন- "আল্লাহ তায়ালা অভিশপ্ত করেন এমন চোরকে যার হাতখানা কাটা গেলো একটি লোহার টুপি কিংবা একখানা রশি চুরির জন্য"। (মুত্তাফাকুন আলাইহি) 

সামান্য রশি চুরির জন্য যদি এমন শাস্তি হতে পারে, তাহলে জনগনের অজস্র সম্পদ ও খাদ্য চুরি করা নেতাদের পরিনতি কি হওয়া উচিৎ??? 

চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকেনা। লোভের মোহে পড়ে অনেক নেতা নামাজী, হাজী ও যাকাত প্রদানকারী হওয়া সত্ত্বেও চুরি ছাড়তে পারেনা। এই হীন কাজের ধরুন এদের ঈমানের বাতি নিভে যায়! 
রাসূল স. বলেন - "ব্যাভিচারী যখন ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তখন সে ঈমানদার থাকে না, চোর যখন চুরি করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না। মদপান কারী যখন মদ পান করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না। লুটপাটকারী যখন লুট করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না"। (মুত্তাফাকুন আলাইহি) 

এভাবে যেসকল নেতা তাদের অধীনস্ত বা জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে তথা যারা জনগনের সেবা করার শপথ করে সেই জনগনের সাথেই প্রতারণা করতেছে তাদের শাস্তির ব্যাপারে রাসূল স. বলেন - "আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার ওপর সাধারণ জনগনের কোন দায়িত্বভার ন্যস্ত করলে অতঃপর সে তাদেরকে সে ব্যাপারে ধোঁকা দিয়ে মৃত্যু বরন করলে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেন"। (বুখারী ও মুসলিম) 

রাসূল (স) আরো বলেন-
ايما راع غش رعيته فهو فی النار 
যেকোন "দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার অধিনস্থ জনগনকে ধোঁকা দিলে সে জাহান্নামী।"

"কোন ব্যক্তি দশ জনের আমির নিযুক্ত হলেও তাকে শেষ বিচারের দিন গলায় হাত বেঁধে হাজির করা হবে। তার ইনসাফ তাকে ছাড়িয়ে নিবে কিংবা তার জুলুম তাকে ধ্বংস করবে। (মুসনাদে আহমদ) 

নেতাদের এহেন ঘৃন্য কাজের ধরুন জনগন তাদেরকে অভিসম্পাত করছে। আর নেতাগন অত্যাচারী মনোভাব নিয়ে জনগণকে অভিসম্পাত করছে। এ ব্যাপারে রাসূল (স) বলেন- " তোমাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট শাসক হচ্ছে তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃনা কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি ঘৃনা পোষন করে। তেমনিভাবে যাদেরকে তোমরা অভিসম্পাত কর এবং তারাও তোমাদেরকে অভিসম্পাত করে"। (মুসলিম) 

যাদের সম্পদ ও অধিকার হরন করা হচ্ছে তারা এক প্রকার মাযলুম বা অত্যাচারিত। আর কোন মাযলুম যখন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে তা সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়। রাসূল (স) বলেন- " মজলুমের বদ-দোয়া কবুল হতে কোন বাধা নেই, যদিও সে কাফির হয়ে থাকুক না কেন"। (মুসনাদে আহমদ) 

সুতরাং দুনিয়াতে নেতৃত্বে আসীন হয়ে যারা জনগনকে ধোঁকা দিচ্ছে, জনগনের সম্পদ ও অধিকার লুন্ঠন করছে তাদের জন্য রয়েছে পরকালে কঠোর শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। 

এতকিছুর পরেও আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে বলেন -  فَمَنۡ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِ ظُلۡمِهٖ وَاَصۡلَحَ فَاِنَّ اللّٰهَ يَتُوۡبُ عَلَيۡهِؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
"তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু"। (মায়েদা-৩৯) 

 وَمَنۡ يَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا اَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهٗ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ اللّٰهَ يَجِدِ اللّٰهَ غَفُوۡرًا رَّحِيۡمًا
"যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে"। (নিসা-১১০) 

রাসূল (স) বলেন- কোন ব্যক্তির কাছে অন্য কোন ব্যক্তির হনন করা অধিকার থাকলে তা ইজ্জত, সম্পদ অথবা যেকোন সম্পর্কীয় হোক না কেন সে যেন তার সাথে আজই ফায়সালা করে নেয়। সে দিনের (হাশর) অপেক্ষায় সে যেন বসে না থাকে যেদিন কোন টাকা পয়াসা থাকবে না। সেদিন তার কোন অর্জিত আমল থেকে থাকলে অন্যের অধিকার হননের পরিবর্তে তার থেকে তা কেড়ে নেওয়া হবে। আর যদি সেদিন তার কোন অর্জিত নেক আমল না থাকে তাহলে তার প্রতিপক্ষের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে"। (বুখারী)

অতএব চোর, ধোঁকাবাজ, প্রতারক ও লুটেরা নেতা বা শাসকদের উচিৎ এখনই উপলব্দি করে নিজেকে সংশোধন করে নেওয়া। অন্যথায় বিচার দিবসে তার আমলের পাল্লা হয়ে যাবে শূন্য। আল্লাহর নিকট যথাযথ তাওবা করে, জনগনের নিকট ক্ষমা চেয়ে, সমুদয় সম্পদ জনগনের কল্যাণে ব্যয় করার মাধ্যমে ভূলের প্রায়শ্চিত্ত করা উচিৎ। অন্যথায় জাহান্নামের ভয়াবহ আযাবের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

এসকল নেতাদের যারা অনুসরণ করবে, এদের পক্ষ হয়ে যারা প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা করবে তারাও মারাত্মক অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এবং পরকালে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হব।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
"যারা নিজেদের সাথে খেয়ানত ও প্রতারণা করে, তুমি তাদের সমর্থন করো না। আল্লাহ‌ খেয়ানতকারী পাপীকে পছন্দ করেন না"। (নিসা-১০৭) 
"এরা মানুষের কাছ থেকে নিজেদের কার্যকলাপ গোপন করতে পারে কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করতে পারে না। তিনি তো তখনো তাদের সাথে থাকেন যখন তারা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে তিনি যা চান না এমন বিষয়ের পরামর্শ করে। আল্লাহ‌ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন"। (নিসা-১০৮) 
"হ্যাঁ,, তোমরা এই অপরাধীদের পক্ষ থেকে দুনিয়ার জীবনেই বির্তক করে নিলে কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তাদের জন্য কে বিতর্ক করবে? সেখানে কে তাদের উকিল হবে?" (নিসা-১০৯) 

অতএব বিবেকবোধ জাগ্রত করতে হবে, অন্যায়, অনৈতিক, চোর ধোঁকাবাজ, প্রতারক নেতাদের পক্ষ না নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। অন্যথায় জগত সংসারে অশান্তি নেমে আসবে। আর প্রতিবাদ না করে তাদের অনুসরণ করলে পরকালে তাদের সাথে অনুসরণ কারীকেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ