মহান রবের ক্ষমা ও অনুগ্রহ এবং রবের স্মরন থেকে গাফেল থাকার পরিনতি
বিষয়ঃ মহান রবের ক্ষমা ও অনুগ্রহ এবং রবের স্মরন থেকে গাফেল থাকার পরিনতি
পাহাড়সম পাপ ও মহাসমুদ্রের মত বিশাল গুনাহের ভান্ডার নিয়ে হতাশ ও নিরাশ না হয়ে প্রভূর দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমার কথা স্মরণ করতে হবে, এবং তার নির্দেশিত পথে এখনই ফিরে আসতে হবে। নুর, হেদায়াত, আর কল্যাণের পথে থেকে পরকালীন সফলতার পথকে সতেজ করে নিতে হবে।
যত বড় অন্যায় ও গোনাহ হোক না কেন, যদি মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজের ভূলের স্বীকৃতি দিয়ে বান্দাহ ক্ষমা চাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ক্ষমা করে দেন।
[ ] ক্ষমা ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَسَارِعُوۡۤا اِلٰى مَغۡفِرَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيۡنَۙ
"দৌঁড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে"। (ইমরান-১৩৩)
قُلۡ يٰعِبَادِىَ الَّذِيۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَةِ اللّٰهِؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِيۡعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ
(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা যুমার: আয়াত-৫৩)
وَلَا تَايۡـَٔسُوۡا مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِؕ اِنَّهٗ لَا يَايۡـَٔسُ مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡكٰفِرُوۡنَ-
“এবং তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, কেননা, কাফের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ: আয়াত-৮৭)
وَمَنۡ يَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ-
“পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে তার প্রভুর দয়া হতে নিরাশ হয়।” (সূরা হিজর: আয়াত-৫৬)
قَالَ عَذَابِىۡۤ اُصِيۡبُ بِهٖ مَنۡ اَشَآءُۚ وَرَحۡمَتِىۡ وَسِعَتۡ كُلَّ شَىۡءٍؕ-
“শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকেই দিয়ে থাকি কিন্ত আমার করুণা সব জিনিসের উপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে"। (সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৫৬)
وَهُوَ الَّذِىۡ يُنَزِّلُ الۡغَيۡثَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا قَنَطُوۡا وَيَنۡشُرُ رَحۡمَتَهٗؕ وَهُوَ الۡوَلِىُّ الۡحَمِيۡدُ-
“ তিনিই সে মহান সত্তা যিনি মানুষের নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার রহমত, করুণা ও দয়াকে চতুর্দিকে বিস্তার করে দেন। তিনি প্রশংসার যোগ্য অভিভাবক"।
(সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৮)
[ ] আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমা পেতে করনীয়
• কুরআনকে আকড়ে ধরতে হবে
وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ وَاٰمَنُوۡا بِمَا نُزِّلَ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّهُوَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّهِمۡۙ كَفَّرَ عَنۡهُمۡ سَيِّاٰتِهِمۡ وَاَصۡلَحَ بَالَهُمۡ
"আর যারা ঈমান এনেছে নেক কাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা মেনে নিয়েছে- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা- আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন"।
• আল্লাহ ও রাসূলের ভালোলবাসা অর্জন করেত হবে
আল্লাহর প্রিয় হতে করনীয় সম্পর্কে আল্লাব বলেন-
لَنۡ تَنَالُوۡا الۡبِرَّ حَتّٰى تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡن ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَىۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِيۡمٌ
তোমরা আল্লাহর প্রিয় হতে পারবে না বা নেকী অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না।
আল্লাহ কাদেরকে ভালোবাসেন সে বিষয়ে পবিত্র কুরয়ানের বানী
الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ فِىۡ السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡكٰظِمِيۡنَ الۡغَيۡظَ وَالۡعَافِيۡنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡ
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (ইমরান -১৩৪)
• জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে হবে (সফঃ ১১-১২)
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
"তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান৷ (সফ-১১)
﴿يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
"আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে৷ আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন৷ এটাই বড় সফলতা" (সফ-১২)
• সৎকর্মশীল বান্দা হতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰهِ قَرِيۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِيۡنَ-
“অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” (সূরা আল আরাফ: আয়াত-৫৬)
• সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
لَا تَدۡرِىۡ لَعَلَّ اللّٰهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِكَ اَمۡرًا-
“তুমি জাননা, আল্লাহ হয়তো নতুন কোন উপায় করবেন।”। (সূরা আত তালাক: আয়াত-১)
وَعَسٰۤى اَنۡ تَكۡرَهُوۡا شَيۡـًٔا وَّهُوَ خَيۡرٌ لَّکُمۡۚ وَعَسٰۤى اَنۡ تُحِبُّوۡا شَيۡـًٔا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمۡؕ وَاللّٰهُ يَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ-
“হয়তো তোমরা যা পছন্দ কর না তা তোমাদের জন্য ভালো এবং তোমরা যা পছন্দ করো তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” (সূরা বাকারা: আয়াত-২১৬)
اللّٰهُ لَطِيۡفٌۢ بِعِبَادِهٖ يَرۡزُقُ مَنۡ يَّشَآءُۚ وَهُوَ الۡقَوِىُّ الۡعَزِيۡزُ-
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান। যাকে যা ইচ্ছা তাই দান করেন। তিনি মহা শক্তিমান ও মহা পরাক্রমশালী"। (সূরা আশ শূরা: আয়াত-১৯)
• আল্লাহকে ডাকতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِنَّهُمۡ كَانُوۡا يُسٰرِعُوۡنَ فِىۡ الۡخَيۡرٰتِ وَيَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَّكَانُوۡا لَنَا خٰشِعِيۡنَ-
“এবং তারা আমাকে আশা নিয়ে ও ভয়ের সাথে ডাকত এবং তারা আমার নিকট বিনীত ছিল”।
(সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-৯০)
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِذۡ تَسۡتَغِيۡثُوۡنَ رَبَّكُمۡ فَاسۡتَجَابَ لَكُمۡ اَنِّىۡ مُمِدُّكُمۡ بِاَلۡفٍ مِّنَ الۡمَلٰۤٮِٕكَةِ مُرۡدِفِيۡنَ
"আর সেই সময়ের কথাও স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফরিয়াদ করছিলে। আর তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, তোমাদের সাহায্য করার জন্য আমি একের পর এক, এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি"।
(সূরা আনফাল: আয়াত-৯)
তাওবা কবুলের ইতিহাস
• ঈমানের ওপর অটল থাকতে হবে এবং হতাশা দূর করতে হবে।
اِنَّ الَّذِيۡنَ قَالُوۡا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسۡتَقَامُوۡا تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ اَلَّا تَخَافُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَبۡشِرُوۡا بِالۡجَنَّةِ الَّتِىۡ كُنۡتُمۡ تُوۡعَدُوۡنَ
"যারা ঘোষণা করেছে, আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে দৃঢ় ও স্থির থেকেছে নিশ্চিত তাদের কাছে ফেরেশতারা আসে এবং তাদের বলে, ভীত হয়ো না, দুঃখ করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শুনে খুশি হও তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে"। (হামীম সাজদাহ-৩০)
وَلَا تَهِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ كُنۡتُمۡ
مُّؤۡمِنِيۡنَ
মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। (ইমরান-১৩৯)
[ ] ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যম ও উপযুক্ত সময়ঃ
• তাহাজ্জুদ
• আল্লাহর রাস্তায় দান
• নফল রোজা
• শুক্রবার সকালে কাহফ তেলোয়াত
• শুক্রবার আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত আল্লাহকে স্মরণ এবং দোয়া করা।
[ ] আল্লাহর স্মরন থেকে গাফিল থাকার পরিণতিঃ
وَمَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِىۡ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيۡشَةً ضَنۡكًا وَّنَحۡشُرُهٗ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ اَعۡمٰى﴾
"আর যে ব্যক্তি আমার 'যিকির' (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।” (তাহা:১২৪)
وَمَنۡ يَّعۡشُ عَنۡ ذِكۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَيِّضۡ لَهٗ شَيۡطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيۡنٌ﴾
"যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়।" (যুখরফ:৩৬)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِكُمۡ اَمۡوَالُكُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُكُمۡ عَنۡ ذِكۡرِ اللّٰهِۚ وَمَنۡ يَّفۡعَلۡ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ﴾
"হে, সেই সব লোক যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়। যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে"। (মুনাফিকুন:৯)
হে মালিক! আমাদেরকে আপনার রহমত ও অনুগ্রহের ব্যপ্তির মধ্যে শামিল থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
এইচ.এম নুর আলমফয়সাল
লেখক ও ব্লগার
পাহাড়সম পাপ ও মহাসমুদ্রের মত বিশাল গুনাহের ভান্ডার নিয়ে হতাশ ও নিরাশ না হয়ে প্রভূর দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমার কথা স্মরণ করতে হবে, এবং তার নির্দেশিত পথে এখনই ফিরে আসতে হবে। নুর, হেদায়াত, আর কল্যাণের পথে থেকে পরকালীন সফলতার পথকে সতেজ করে নিতে হবে।
যত বড় অন্যায় ও গোনাহ হোক না কেন, যদি মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজের ভূলের স্বীকৃতি দিয়ে বান্দাহ ক্ষমা চাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ক্ষমা করে দেন।
[ ] ক্ষমা ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَسَارِعُوۡۤا اِلٰى مَغۡفِرَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيۡنَۙ
"দৌঁড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে"। (ইমরান-১৩৩)
قُلۡ يٰعِبَادِىَ الَّذِيۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَةِ اللّٰهِؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِيۡعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ
(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা যুমার: আয়াত-৫৩)
وَلَا تَايۡـَٔسُوۡا مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِؕ اِنَّهٗ لَا يَايۡـَٔسُ مِنۡ رَّوۡحِ اللّٰهِ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡكٰفِرُوۡنَ-
“এবং তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, কেননা, কাফের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ: আয়াত-৮৭)
وَمَنۡ يَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ-
“পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে তার প্রভুর দয়া হতে নিরাশ হয়।” (সূরা হিজর: আয়াত-৫৬)
قَالَ عَذَابِىۡۤ اُصِيۡبُ بِهٖ مَنۡ اَشَآءُۚ وَرَحۡمَتِىۡ وَسِعَتۡ كُلَّ شَىۡءٍؕ-
“শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকেই দিয়ে থাকি কিন্ত আমার করুণা সব জিনিসের উপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে"। (সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৫৬)
وَهُوَ الَّذِىۡ يُنَزِّلُ الۡغَيۡثَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا قَنَطُوۡا وَيَنۡشُرُ رَحۡمَتَهٗؕ وَهُوَ الۡوَلِىُّ الۡحَمِيۡدُ-
“ তিনিই সে মহান সত্তা যিনি মানুষের নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার রহমত, করুণা ও দয়াকে চতুর্দিকে বিস্তার করে দেন। তিনি প্রশংসার যোগ্য অভিভাবক"।
(সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৮)
[ ] আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমা পেতে করনীয়
• কুরআনকে আকড়ে ধরতে হবে
وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ وَاٰمَنُوۡا بِمَا نُزِّلَ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّهُوَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّهِمۡۙ كَفَّرَ عَنۡهُمۡ سَيِّاٰتِهِمۡ وَاَصۡلَحَ بَالَهُمۡ
"আর যারা ঈমান এনেছে নেক কাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা মেনে নিয়েছে- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা- আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন"।
• আল্লাহ ও রাসূলের ভালোলবাসা অর্জন করেত হবে
আল্লাহর প্রিয় হতে করনীয় সম্পর্কে আল্লাব বলেন-
لَنۡ تَنَالُوۡا الۡبِرَّ حَتّٰى تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡن ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَىۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِيۡمٌ
তোমরা আল্লাহর প্রিয় হতে পারবে না বা নেকী অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না।
আল্লাহ কাদেরকে ভালোবাসেন সে বিষয়ে পবিত্র কুরয়ানের বানী
الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ فِىۡ السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡكٰظِمِيۡنَ الۡغَيۡظَ وَالۡعَافِيۡنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡ
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (ইমরান -১৩৪)
• জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে হবে (সফঃ ১১-১২)
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
"তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান৷ (সফ-১১)
﴿يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
"আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে৷ আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন৷ এটাই বড় সফলতা" (সফ-১২)
• সৎকর্মশীল বান্দা হতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰهِ قَرِيۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِيۡنَ-
“অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” (সূরা আল আরাফ: আয়াত-৫৬)
• সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
لَا تَدۡرِىۡ لَعَلَّ اللّٰهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِكَ اَمۡرًا-
“তুমি জাননা, আল্লাহ হয়তো নতুন কোন উপায় করবেন।”। (সূরা আত তালাক: আয়াত-১)
وَعَسٰۤى اَنۡ تَكۡرَهُوۡا شَيۡـًٔا وَّهُوَ خَيۡرٌ لَّکُمۡۚ وَعَسٰۤى اَنۡ تُحِبُّوۡا شَيۡـًٔا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمۡؕ وَاللّٰهُ يَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ-
“হয়তো তোমরা যা পছন্দ কর না তা তোমাদের জন্য ভালো এবং তোমরা যা পছন্দ করো তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” (সূরা বাকারা: আয়াত-২১৬)
اللّٰهُ لَطِيۡفٌۢ بِعِبَادِهٖ يَرۡزُقُ مَنۡ يَّشَآءُۚ وَهُوَ الۡقَوِىُّ الۡعَزِيۡزُ-
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান। যাকে যা ইচ্ছা তাই দান করেন। তিনি মহা শক্তিমান ও মহা পরাক্রমশালী"। (সূরা আশ শূরা: আয়াত-১৯)
• আল্লাহকে ডাকতে হবে
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِنَّهُمۡ كَانُوۡا يُسٰرِعُوۡنَ فِىۡ الۡخَيۡرٰتِ وَيَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَّكَانُوۡا لَنَا خٰشِعِيۡنَ-
“এবং তারা আমাকে আশা নিয়ে ও ভয়ের সাথে ডাকত এবং তারা আমার নিকট বিনীত ছিল”।
(সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-৯০)
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
اِذۡ تَسۡتَغِيۡثُوۡنَ رَبَّكُمۡ فَاسۡتَجَابَ لَكُمۡ اَنِّىۡ مُمِدُّكُمۡ بِاَلۡفٍ مِّنَ الۡمَلٰۤٮِٕكَةِ مُرۡدِفِيۡنَ
"আর সেই সময়ের কথাও স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফরিয়াদ করছিলে। আর তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, তোমাদের সাহায্য করার জন্য আমি একের পর এক, এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি"।
(সূরা আনফাল: আয়াত-৯)
তাওবা কবুলের ইতিহাস
• ঈমানের ওপর অটল থাকতে হবে এবং হতাশা দূর করতে হবে।
اِنَّ الَّذِيۡنَ قَالُوۡا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسۡتَقَامُوۡا تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ اَلَّا تَخَافُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَبۡشِرُوۡا بِالۡجَنَّةِ الَّتِىۡ كُنۡتُمۡ تُوۡعَدُوۡنَ
"যারা ঘোষণা করেছে, আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে দৃঢ় ও স্থির থেকেছে নিশ্চিত তাদের কাছে ফেরেশতারা আসে এবং তাদের বলে, ভীত হয়ো না, দুঃখ করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শুনে খুশি হও তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে"। (হামীম সাজদাহ-৩০)
وَلَا تَهِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ كُنۡتُمۡ
مُّؤۡمِنِيۡنَ
মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। (ইমরান-১৩৯)
[ ] ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যম ও উপযুক্ত সময়ঃ
• তাহাজ্জুদ
• আল্লাহর রাস্তায় দান
• নফল রোজা
• শুক্রবার সকালে কাহফ তেলোয়াত
• শুক্রবার আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত আল্লাহকে স্মরণ এবং দোয়া করা।
[ ] আল্লাহর স্মরন থেকে গাফিল থাকার পরিণতিঃ
وَمَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِىۡ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيۡشَةً ضَنۡكًا وَّنَحۡشُرُهٗ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ اَعۡمٰى﴾
"আর যে ব্যক্তি আমার 'যিকির' (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।” (তাহা:১২৪)
وَمَنۡ يَّعۡشُ عَنۡ ذِكۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَيِّضۡ لَهٗ شَيۡطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيۡنٌ﴾
"যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়।" (যুখরফ:৩৬)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِكُمۡ اَمۡوَالُكُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُكُمۡ عَنۡ ذِكۡرِ اللّٰهِۚ وَمَنۡ يَّفۡعَلۡ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ﴾
"হে, সেই সব লোক যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়। যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে"। (মুনাফিকুন:৯)
হে মালিক! আমাদেরকে আপনার রহমত ও অনুগ্রহের ব্যপ্তির মধ্যে শামিল থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
এইচ.এম নুর আলমফয়সাল
লেখক ও ব্লগার
Comments
Post a Comment