কৃতজ্ঞতা- ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ


কৃতজ্ঞতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও বান্দার কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাকে প্রতিনিয়ত যে অফুরন্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহ দিয়ে যাচ্ছেন, সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও বান্দা তা শেষ করতে পারবে না। তাই সর্বাবস্থায় বান্দার উচিৎ আল্লাহর প্রসংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স) কে বলেন- وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর' (বনী ইসরাঈল -১১১)। রাসূল (স) বলেন, ‘আল্লাহ কোন বান্দাকে কোন নেয়ামত দিলে সে যদি ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে, তাহলে যা সে পেয়েছে, তার চেয়ে উত্তম আল্লাহ তাকে দান করে থাকেন'।আল্লাহ তায়ালা বলেন-  ‘অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর এবং আমার আদেশ লঙ্ঘন কর না' (বাকারা-১৫২)। অন্য আয়াতে বলেন- ‘তোমরা যদি আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর, তোমাদেরকে আমি আরো অধিক দিব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর' (ইবরাহীম-১৪)।

পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি কাউকে সামান্য পরিমাণও কোন উপকার বা সহযোগিতা করে, তখন তার প্রতি আনন্দচিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অবশ্যই কর্তব্য। এতে একদিকে যেমন উক্ত ব্যক্তির অন্তরে আরেকজনকে সাহায্য করার ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি হবে; অপরদিকে যিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন, তার প্রতিও একটা আন্তরিক টান বা ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এজন্য রাসূল (স) বলেন- ‘কারো যদি উপকার করা হয় আর সে যদি উপকারকারীকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) বলে, তাহলে সে চূড়ান্ত প্রশংসা করল’।
 অন্য হাদীসে রাসূল (স) বলেন- ‘কাউকে কোন কিছু দান করা হলে সে যদি তা পায় তাহলে যেন তার বিনিময় প্রদান করে। যদি প্রতিদান দেয়ার কিছু না পায়, তাহলে যেন দাতার প্রশংসা করে। কারণ যে দাতার প্রশংসা করল, সে তার শুকরিয়া আদায় করল এবং যে তা গোপন করল, সে তার প্রতি অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করল’।

তবে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। অতিমাত্রায় প্রশংসা করাকে তোষামোদ বলে, যা নীচতা ও লজ্জাহীনতার নামান্তর। এর সাথে মিথ্যা মিশ্রিত থাকে।
অতিমাত্রায় প্রশংসাকারী একসাথে তিন ধরনের গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
➡তোষামুদে লোকেরা নিজের মতলব হাছিলের জন্য এমন প্রশংসা করে, যা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা নির্লজ্জ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
➡প্রশংসাকারী এমন প্রশংসাসূচক বাক্যাবলী উচ্চারণ করে, যার প্রতি সে নিজেও বিশ্বাসী নয়। এটা স্পষ্ট মুনাফেকী।
➡এভাবে প্রশংসা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে অন্যের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে। এতে পারস্পরিক ভালোবাসা বিনষ্ট হয়।

অপরদিকে এরূপ কাজে প্রশংসিত ব্যক্তির তিন ধরনের ক্ষতি হয়।
🚫এর মাধ্যমে প্রশংসিত ব্যক্তির অন্তরে অহংকার পয়দা হয়, যা তার জন্য ক্ষতির কারণ।
🚫সে অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নযরে দেখতে থাকে এবং
🚫সে সর্বক্ষণ অন্যের নিকট থেকে এরূপ প্রশংসাবাণী শুনার জন্য আগ্রহী থাকে।

এধরনের নির্লজ্জ প্রশংসাকারীর পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যারা নিজেরা যা করেনি এমন কাজের জন্যও প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে-এরূপ কখনও মনে কর না। তাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে' (আল ইমরান-১৮৮)।
আবূ মূসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বললেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে অথবা ব্যক্তিটির মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেললে’।
এরপরও কিছু মানুষ আছে যারা আপন স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে তোষামোদ স্বরূপ অতিমাত্রায় প্রশংসা করে থাকে। এই প্রকৃতির লোক সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন- ‘যখন তোমরা অত্যধিক প্রশংসাকারীদেরকে দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে’।
সুতরাং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই শরীয়তের সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।

এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল
নোবিপ্রবি, নোয়াখালী

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ