বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের পথে বাধা কোথায়ঃ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা।
বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের পথে বাধা কোথায়ঃ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা।
(আগে পড়ুন তারপর বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন)
ভারতীয় উপমহাদেশে যারা বা যেসকল দল নিজেদেরকে হকপন্থী দাবী করে এবং কিছু ভূলত্রুটি বাদ দিলে সত্যিই যারা ইসলামের জন্য কাজ করতেছে বলে প্রমাণ হয় তারা মোটামুটি ৩ ভাগে বিভক্তঃ
1. দেওবন্দী
2. আহলে হাদীস
3. জামায়াতে ইসলামী
এরমধ্যে প্রথম দুই শ্রেণী নিজেদের মধ্যে অসংখ্য দল উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। অনেকে এটাকে ফেরকা বলে কিন্তু আমি ফেরকা বলাকে সমর্থন করিনা। কেননা ফেরকা অনেকটা মতাদর্শের ন্যায় কিছু একটা বুঝায় অর্থাৎ সরাসরি তাওহিদ, রেসালাতের সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকান্ড ফেরকার মধ্যে দেখা যায়।
উপরোক্ত তিনটি দলের মধ্যে বেশিরভাগ দূরত্ব হলো ইজতিহাদি মাসয়ালা নিয়ে। এবং ভালোভাবে না জেনে ধারনার উপর ভিত্তি করে একদল আরেক দলের ব্যাপারে খারাপ ধারনা করাই হচ্ছে দূরত্বের অন্যতম কারন।
যাইহোক ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদেরকে হকপন্থী প্রমাণের চেষ্টা করা। আলাদা আলাদাভাবে তিন দলই নিজেদেরকে হকপন্থী দাবী করে এবং ঐক্য না হওয়ার জন্য পরস্পরের ইজতিহাদি বিশ্বাসগুলোকে দায়ী করে আসতেছে।
সাধারণভাবে চিন্তা করুন, কোন পরিবারের সাথে ঐক্য করতে হলে আগে নিজেদেরকে এক পরিবার হতে হবে। অর্থাৎ বুঝাতে চাচ্ছি উপরোক্ত তিনটি দল যদি পরস্পর সত্যিই ঐক্য চাই তাহলে আগে তাদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধ দূর করতে হবে। যেমন বিশাল একগোষ্ঠী আছে যারা সকল কিছুতে দেওবন্দকে মানদণ্ড হিসেবে মানে কিংবা পরিচয়ে নিজেদেরকে দেওবন্দের অনুসারী ঘোষনা করে। এখন তারা যদি আবার একাধিক দলে বিভক্ত থাকে তাহলে অন্য দুইটি দল কার সাথে ঐক্য করবে???
যেমন আপনি আব্দুল করিম বংশের সাথে ঐক্য করতে চান কিন্তু করিম সাহেবের বংশ ১০ ভাগে বিভক্ত। এখন আপনার পক্ষে কি সম্ভব আলাদা আলাদাভাবে ১০ গ্রুপের সাথে ঐক্য করা? সহজ হলো করিম সাহেবের বংশের ১০ গ্রুপ একসাথ হয়ে যাওয়া, কেননা সকল গ্রুপই করিম সাহেবকে অন্ধের মতো মান্য করে।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে দেওবন্দী ও সাংগঠনিক আহলে হাদীস পন্থীরা এভাবেই বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে আছেন। আবার এই উপদলগুলো ঐক্য না হওয়ার জন্য নিজেদের বাদ দিয়ে অন্য প্রধান দুই দলকে দায়ী করে। আবার দেওবন্দী ও আহলে হাদীসরা আলাদাভাবে উভয়ই জামায়াতকে দায়ী করে।
যুক্তির খাতিরে যদি ঐক্য না হওয়ার জন্য জামায়াতকেই দায়ী করা হয় এবং জামায়াত তাদের ব্যাপারে উত্থাপিত সকল অভিযোগ যদি মেনেও নেয়। তখন কথা আসবে জামায়াত কাদের সাথে ঐক্য করবে??? কারন দেওবন্দ কিংবা আহলে হাদীস গ্রুপগুলো একে অন্যকে মানতে না পেরে নিজেরাই আলাদা হয়ে আছে। কিন্তু স্ব স্ব যায়গা থেকে আবার সকল উপদল নিজেদেরকে দেওবন্দ বা আহলে হাদীসের অনুসারীও বলতেছে। এই দুই দলের মধ্যে আমীরকে অমান্য করে নিজেকে আমীর ঘোষণা করার ঘটনা হরহামেশাই দেখা গিয়েছে। বা প্রতিষ্ঠাকালীন নিয়ম নীতি পরিহার করে দলকে বেইজ করে একাধিক জন নিজেই আলাদা দল কায়েম করলেন।
আপনিই বলুন, আপনি ঐক্য করার জন্য কাকে বেচে নিবেন। আগের আমীরের দল নাকি তাকে অস্বীকার করে গঠন হওয়া নতুন আমীরের দল!!!!!!!!! আলাদা ভাবেতো দুই দলকে গ্রহন করা যাবে না। কেননা ঐ হকপন্থী আমিরইতো অন্য আমীরকে অযোগ্য কিংবা ভূল ভাবার কারনেই নিজে দল গঠন করলেন!!!
আসুন দেওবন্দী ও আহলে হাদীসের বিভিন্ন উপদলের সাথে পরিচিত হয়।
👉দেওবন্দী উপদল:
(১) তবলীগ জামায়াত
(২) তাবলিগ জামাত (মওলানা সা'দ)
এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে সত্যপন্থী মনে করে না, আবার উভয়ই নিজেদেরকে দেওবন্দী ঘোষনা দেয়।
(৩) ইসলামী আন্দোলন (চরর্মোনাই)
(৪) জমিয়তে ইসলাম (ওয়াক্কাস)
(৫) জমিয়তে ইসলাম (নূর হোসেন)
(৫) খেলাফত আন্দোলন,
(৬) খেলাফত মজলিস,
(৭) ইসলামী ঐক্যজোট (আজিজুল হক)
(৮) ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী)
(৯) ইসলামী ঐক্যজোট (মেসবাহুর রহমান)
(১০) ইসলামী ঐক্যজোট (ইজহারুল ইসলাম)
(১১) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
(১২) নেজামে ইসলাম
মাঠে ময়দানে সরাসরি এক দল আরেক দলের বিরোধিতা না করলেও সকল দল নিজেদেরকে দেওবন্দী বলে আবার সবাই নিজেদেরকে হকপন্থী স্বয়ংসম্পূর্ণ দল মনে করে।। আবার বেশীরভাগ দলগুলোর গঠনের ইতিহাস হলো একজন অন্যজনকে অমান্য করে নতুন দল গঠন করে।
(১২) হেফাজতে ইসলাম
হেফাজতে ইসলাম দেওবন্দ অনুসারী একটি কাওমি প্লাটফর্ম। সব উপদল আহমদ শফীকে গুরু মানলেও নিজ দলের বিলুপ্তি ঘোষনা করে আহমদ শফীর হেফাজতের প্লাটফর্ম থেকে ইসলামের খেদমত করতে প্রস্তুত নয়। আবার এদের মধ্যে কিছু উপদল হেফাজতের বিরোধীও আছে। অথচ আহমদ শফী বাংলাদেশের দেওবন্দী খলিফা।
অধিকাংশ দেওবন্দ অনুসারী দল ও কর্মীরা তাদের মুরুব্বিদের অন্ধের মতো অনুসরণ করে। তাই মুরুব্বীরা যা বলে তাই একমাত্র সঠিক মনে করে। সেজন্যই অন্য দুই দলের বিরুদ্ধে তাদের ঢালাওভাবে এই অবস্থান। কিতাবের চেয়ে মুরুব্বিরা এদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
★ সত্যিই যদি দেওবন্দকে ভিত্তি করে এরা নিজেদেরকে হকপন্থী প্রমান করতে চাই তাহলে অচিরেই সবাইকে নিজ নিজ দল বিলুপ্ত করে আহমদ শফীর অধীনে আসা উচিৎ।
👉আহলে হাদীসঃ
বাংলাদেশের কিছু মূর্খ প্রকৃতির লোক আছে যারা আহলে হাদীস নামটা সহ্যই করতে পারে না। আহলে হাদীস মানে খারাপ কিছু নয়। যারা নিজেদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে পরিচালনা করে তারাই আহলে হাদীস হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু কিছু মানুষ সহীহ হাদীসকে বেইজ করে ক্রমান্বয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে থাকে। এর উৎপত্তির ব্যাপারে নির্দিষ্ট টাইম বলতে না পারলেও বিভিন্নভাবে জানা যায় বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশে ১২৪৬ হিজরী থেকে আহলে হাদীসের বিভক্তি শুরু হয় এবং বিভক্তি গ্রুপ মাযহাবের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে।
কথিত আছে বাংলাদেশ জমিয়তে আহলে হাদীসের মূল প্রতিষ্ঠার সময় হলো ১৯৪৬ সাল। কিন্তু আহলে হাদীস বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশে এখন আর একদলে নেই। অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। যেমন -
(১) জমিয়তে আহলে হাদীস
(২) গুরাবায়ে আহলে হাদীস
(৩) আহলে হাদীস আন্দোলন (গালীব)
(৪) আহলে হাদীস আন্দোলন (আঃ রাজ্জাক)
(৫) আহলে হাদীস তবলীগে ইসলাম
(৬) জমিয়তে শুব্বানে আহলে হাদীস
(৭) আহলে হাদীস যুব সংঘ (মুযাফ্ফর)
(৮) মাদখালী আহালে হাদীস (আকরামুজ্জামান)
(৯) অলইন্ডিয়া আহলে হাদীস
(১০) আঞ্জুমানে আহলে হাদীস
(১১) বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদীস।
(১২) ট্রু সালাফী (আহলে হাদীস)
(১৩) কুতুবী সালাফী (আহলে হাদীস)
(১৪) সুরুলি সালাফী (আহলে হাদীস)
(১৫) জামিয়াহ আহলে হাদীস
★ কথা হলো সবাইতো আহলে হাদীস তথা নিজেদেরকে একমাত্র সহীহ হাদীসের প্রকৃত অনুসারী বলে দাবী করে। তাহলে কোন হাদীসের অমান্যতার কারনে তারা আজ একদল থেকে অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে গেছে???? কেন তারা সবাই মিলে একটি আহলে হাদীস সংগঠনের অধীনে থাকতে পারে না?? যেখানে সিহাহ সিত্তার ইমামরা পর্যন্ত মাযহাবের অনুসরণ করে গিয়েছেন, সেখানে এরা কোন যুক্তিতে মাযহাবকে কটাক্ষ করে। আছে কি এসবের কোন জবাব??
★ তাই অন্যদেরকে ঐক্যের দিকে আহ্বান করার পূর্বে এদের উচিৎ আগে নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করা। যারা নিজেরাই নিজেদের বেইজ থেকে ভেংগে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন তারা কিভাবে অন্যকে ঐক্যের কথা বলে!!!!
👉জামায়াতে ইসলামীঃ
জামায়াতে ইসলামী ১৯৪১ সাল থেকে এখনো অবিচ্ছিন্ন অবস্থায়ই রয়েছে। এখান থেকে কোন উপদল বের হয়নি। তবে কিছু লোক ইজতিহাদি বিষয়ে মতের মিল না থাকায় দল থেকে বেরিয়ে গেছে কিন্তু তারা অমত ব্যক্ত করা বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিজেদের পক্ষ থেকে সঠিক কোন সমাধানও দিতে পারেনি। অবশ্য একটা সময় তারা সহ সকল আলেম সেই বিষয়গুলো মেনে নিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই দেওবন্দী আলেমরা এর বিরোধীতা করা শুরু করছে। অবশ্য প্রথম থেকেই যেসকল পয়েন্টে জামায়াতের বিরোধিতা করে আসছিলো তার অধিকাংশই দেওবন্দ অনুসারীরা ইতমধ্যে গ্রহন করে নিয়েছে।
যেমন- রাজনীতি, গনতন্ত্র, ভোট, নারীর সাথে জোট, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা ইংরেজি পড়াশোনা ইত্যাদি।।।। দেওবন্দীদের প্রায়ই সকল দল এখন এগুলো গ্রহন করেছে, এবং নিজেদের দলও এগুলো নিয়েই পরিচালিত। তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে কেন অযথা এসবের বিরোধীতা করেছিলো।
জামায়াত নিয়ে এখনো কিছু বিতর্ক আছে।। আর সেটা হলো সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর কিছু রচনা।
জামায়াতের সাথে ঐক্য না হওয়ার পেছেনে দেওবন্দীদের একাংশের বক্তব্য হলো, মওদুদী বাদ ও নারীর (দলীয় প্রধান) সাথে জামায়াতের জোট। এক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়, মুফতী আমিনী, আব্দুল লতিফ নেজামী সহ দেওবন্দ অনুসারীদের বড় একটি অংশ একই জোটে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কখনো কথা আসেনি। আর মওদুদীবাদ নামক কোন কিছু পৃথিবীতে নেই, যারা এই শব্দ প্রচার করতেছে তারা অপবাদে লিপ্ত।
★ তবে বিতর্ক যাই থাকুক জামায়াতই একমাত্র দল যারা এখনো তাদের প্রতিষ্ঠাকালীন একক ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এদিক থেকে তাহলে সবার নিজস্ব বিতর্কগুলো বাদ দিলে ঐক্যের জন্য সবার আগে জামায়াতই প্রস্তুত রয়েছে।
➡এর বাহিরে আরো ২ গ্রুপ রয়েছে যাদের সার্বিক কর্মকান্ডের অধিকাংশই ইসলাম বিরোধী।
👉ব্রেলভীঃ এদেরকে ফেরকা বললে আহামরি ভূল কিছু হবে না।
কেননা এই দল-উপদলগুলো ইসলাম নিয়ে অনেকটা তামাশা করতেছে, ইচ্ছামত ইসলামের নিয়ম নীতি বানিয়ে নিচ্ছে।
(১) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত (চট্টগ্রাম)
(২) ফুলতলী (সিলেট)
(৩) দেওয়ান বাগী
(৪) রাজার বাগী
(৫) ফুলেশ্বরী
(৬) সুরেশ্বরী
(৭) এনায়াতপুরী
(৮) আটরশী
(৯) চন্দ্রপুরী
(১০) মাইজভান্ডারী
(১১) ইসলামীক ফ্রন্ট (মতিন)
(১২) ইসলামী ফ্রন্ট (জুবাইর)
(১৩) দাওয়াতুল ইসলাম
(১৪) মুনিরীয়া তাবলিগ কমিটি
(১৫) তরিকত ফেডারেশন
(১৬) গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।
এরা সামান্যতম কিছু হলেই নিজেরা একে অপরকে এবং ভিন্ন মতের দল-উপদলকে কাফের বলে ফতুয়া দিয়ে থাকে। অথচ নিজেরা প্রতিনিয়ত শিরক, কুফরীতে লিপ্ত।
👉জঙ্গি ফিরকা: এ গ্রুপগুলো সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম বিরোধী। এদের লেবাস যদিও ইসলামী কিন্তু এদের কোন কাজই ইসলাম সম্মত নয়। বোমাবাজি, মানুষ খুন ইত্যাদির নামে এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই। প্রকৃতপক্ষে এরা ইসলামী কোন গ্রুপ নয়। ইহুদি-খ্রিস্টান ও বামদের দ্বারাই এসব দল পরিচালিত হয়।যাদের টার্গেট হচ্ছে ইসলামের লেবাস লাগিয়ে সন্ত্রাসী কাজ করে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
(১) জেএমবি গ্রুপ
(২) আনসারুল্লাহ বাংলা টিম
(৩) হেজবুত তাহরীক
(৪) হেজবুত তাওহীদ
(৫) হরকাতুল জিহাদ
(৬) আই এস
উপরোক্ত দলগুলোকে কোনভাবেই ইসলামী দল বলা যাবে না।
[ ] তুলনামূলক কথাঃ
• শেষোক্ত দুইটি দল হকপন্থী নয়। এর মধ্যে জঙ্গী ফেরকা পুরোপুরি ইসলাম বহির্ভূত।
• আর ব্রেলবী ফেরকা যদি আকিদা ও রেসালতের বিশ্বাসে পরিবর্তন আনতে পারে তাহলে তাদেরকে ঐক্যে স্থান দেওয়া যাবে। অন্যথায় তারাও বাতিল ফেরকা হিসেবেই সাব্যস্ত হবে।
• দেওবন্দী ও আহলে হাদীস সকল গ্রুপকে এক একদলে পরিনত হতে হবে। অন্যথায় ঐক্য না হওয়ার জন্য তারাই দায়ী থাকবে।
• দেওবন্দীরা জামায়াত ও আহলে হাদীসের নাম শুনতেই পারে না। আহলে হাদীসের পরিচয় উপরে দেওয়া হয়েছে। দেওবন্দীদের এই দেখতে না পারার মানসিকতা চেইঞ্জ করতে হবে।
• দেওবন্দীরা একসময় রাজনীতি, নির্বাচন, গনতন্ত্র, ভোট ইত্যাদিকে হারাম বলতো এবং বেশ কিছুকাল পর নিজেরাই এগুলোকে জায়েজ বলতেছে। তাই তাদের উচিৎ এখনো হিংসা ও গোড়ামীর কারনে যেসকল বিষয়কে নাজায়েজ সাব্যস্ত করে কথা বলে যাচ্ছে তা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। অন্যথায় বারবার তাদের জ্ঞানের সংকীর্ণতা ফুটে উঠবে।
• দেওবন্দীদেরকে কথায় কথায় মুরুব্বদীদের রেফারেন্স দেওয়া ও তাদের অন্ধ অসুরন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ইসলামের প্রধান দলীল হচ্ছে কুরআন এন্ড সুন্নাহ। এখানে দলীল না পেলে তারপর মুরুব্বীদের দলীল তথা ইজমা কিয়াস। কিন্তু তারা রেফারেন্স উপস্থান শুরু করেই মুরুব্বীদের নাম নিয়ে, যা মোটেই উচিত নয়।
• আহলে হাদীস পন্থীদের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি পরিহার করা উচিৎ। এদের অধিকাংশ গ্রুপ জামায়াত ও দেওবন্দীদের সরাসরি বিরোধীতা করে। কিছু কিছু গ্রুপ মাযহাবের কট্টর বিরোধীতা করে। এসব পরিহার করা উচিৎ। জিহাদ মানে সবসময় যুদ্ধে জড়িয়ে থাকা নয়, যুদ্ধ জিহাদের চুড়ান্ত একটি রুপ। জিহাদ মানে হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা করা। সেজন্য দাওয়াত, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির পাশাপাশি নিজেদের মতো করে অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতিতে অংশগ্রহণ ও পরিবর্তনের চেষ্টা করা। কিন্তু আহলে হাদীসের বেশ কিছু গ্রুপ এটা মানতে রাজি নয়। এদের বক্তব্য হলো জিহাদের ঘোষনা আসবে রাষ্ট্র প্রধান থেকে, কথা হলো রাষ্ট্র প্রধান যদি নিজেই জিহাদের পক্ষে না হয় তাহলে কি হবে??? তার বাস্তব ভিত্তিক কোন সমাধান তাদের পক্ষ থেকে নেই। এরা গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে আবার এই গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জুলুম সরকারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তারও বিপক্ষে।
• তাই আহলে হাদীসকে এসব অতি কট্টরপন্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবেই ঐক্য সম্ভব।
• সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীকে নিয়ে এবং তার রচনাগুলো নিয়ে এখনো যেসকল মন্তব্য রয়ে গিয়েছে তার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর স্পষ্ট সাংগঠনিক ব্যখ্যা থাকা উচিৎ। তাহলে তাদের ব্যাপারে সবার ধারণা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এর আগেও ভূল প্রচার করা পয়েন্টগুলো বিরোধিতা করা দলগুলো একটা সময় মেনে নিয়েছে, তাই এখনো মেনে নেবে এই চিন্তা না করে দ্রুত সাংগঠনিক সমাধান দেওয়া উচিৎ। তাহলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত থেকে রক্ষা পাবে।
• এবং যেসকল বিষয় এডিয়ে গেলে দলের দৃশ্যমান কোন ক্ষতি হবে না। জামায়াতের উচিৎ সেসকল বিতর্কিত বিষয় এডিয়ে যাওয়া।
• দৃশ্যমান সুন্নাত অনুসরণে জামায়াত অন্য দুই গ্রুপের চেয়ে পিছিয়ে আছে সুন্নাতের সৌন্দর্য রক্ষা ও পালনে জামায়াতকে আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিৎ।
[ ] তিন দলের ভালো দিকঃ এক কথায় তিন দলের ভালো দিক হলো-
• দেওবন্দীরা মাযহাব সহ বিভিন্ন ইজমা, কিয়াসের কিতাব এবং মাসয়ালা মাসায়েল রিলেটেড জ্ঞানে পন্ডিত। এরা মুল কিতাব বেশি অধ্যয়ন করে। দৃশ্যমান সুন্নাত পালনে অগ্রগামী। দ্বীন দুনিয়ার সম্পদের ব্যাপারে এদের তেমন আগ্রহ নেই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সহ অনেক ক্ষেত্রে দেওবন্দীদের অবদান ছিলো প্রসংশনীয়।
• আহলে হাদীস: সহীহ হাদীস চর্চা ও সংরক্ষণে এরা সবচেয়ে অগ্রগামী। কুরআন সুন্নহের সরাসরি দলীলই এদের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। দৃশ্যমান সুন্নাত পালনে এরাও দেওবন্দীদের ন্যায় যত্নবান। শিক্ষিত সমাজে এদেরকে পছন্দকারী সংখ্যা বাড়তেছে।
• জামায়াতে ইসলামীঃ জামায়াতে ইসলামী মাযহাব, আহলে হাদীস উভয় মিশ্রিত একটি সংগঠন।এদের মধ্যে দৃশ্যমান সুন্নাতের ঘাটতি দেখা গেলেও অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতিতে ইসলামের প্রয়োগের বিষয়ে এদের ভূমিকা বাকীদের চেয়ে অনেক উপরে। এই দলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ (আলেম, সাহিত্যিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক ইত্যাদি) সমানতালে অংশগ্রহণ করে। সকল কিছুতে এরা কুরআন হাদীসকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ইজতিহাদি বিষয় নিয়ে অতিমাত্রায় এরা বিতর্ক করে না। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো অনেকেই এদের বিরোধী এমনকি এদেরকে অনেকে কাফেরও বলেছে এরপরেও তারা পাল্টা বিরোধিতা না করে নিজেদের আদর্শ দিয়েই অভিযোগের জবাব দিয়েছে। তাছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতির সংষ্কার ও সরকারে সরাসরি ইসলামের অনুপ্রবেশের চেতনা জামায়াতই প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রথম দিকে সবাই বিরোধিতা করলেও পরে ঠিকই সবাই এই পথেই এসেছে। আপাতত একক ইসলামি দল হিসেবে এরাই সর্ববৃহৎ।
👉সারকথাঃ
[ ] আলহামদুলিল্লাহ, প্রথম তিনটি দলের আকীদার ভিত্তি যেহেতু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মানদণ্ড আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। সেহেতু ঐক্য অসম্ভব নয়।
[ ] সবমিলিয়ে ইজতিহাদি বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে তাওহিদ ও রেসালাতের বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতে পারলে তবেই ঐক্য হওয়া সম্ভব। অন্যথায় কেয়ামত পর্যন্তও ঐক্য হবে না। আর এই ৩টি দলের মধ্যে ঐক্য না হলে বাংলাদেশে আদৌ ইসলামী হুকুমত কায়েক করা সম্ভব হবে না। একইসাথে সাধারণ মুসলমান আরো বিভ্রান্ত হতে থাকবে। ইসলাম বিরোধীরা সংখ্যায় ও শক্তিতে কম হয়েও ইসলামের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে থাকতে সক্ষম হবে।
[ ] ব্যক্তি বিশেষের বক্তব্য অনুসরন না করে সকল দলকে সরাসরি কোরআন হাদীস অনুসরণ করতে হবে।
[ ] নিজেদের মধ্যকার ভূলত্রুটি বের করে তা নিজেদেরকেই সংশোধন করে নেওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে এতদিন এসব করেছি এখন ছেড়ে দিলে কে কি বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।
[ ] একইভাবে ভারত, পাকিস্তান তথা পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী ঐক্য তৈরি করা সম্ভব।
আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝদান করুন, আমীন।
এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল
ব্লগার ও লেখক
জাজাকাল্লাহ
ReplyDeleteমাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লেখনি. আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
ReplyDeleteমাশা-আল্লাহ
ReplyDeleteসুন্দরপর্যালোচ।
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ
Deleteখুবই ভালো লেখা। মাশআললাহ
ReplyDelete