আত্মার প্রশান্তি

এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল
ব্লগার ও লেখক

এ পৃথিবীতে বিচরন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে বিভিন্ন প্রকারের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মানুষ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হোন। চাকুরি, ব্যবসা, পড়াশোনা, স্ত্রী-সন্তান, সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে মানুষকে সর্বদা পেরেশানির মধ্যে থাকতে হয়।। ক্ষনিকের এই জীবনে ঘটিত কিছু সমস্যা সমাধানযোগ্য হলেও অধিকাংশ সমস্যাই থেকে যায় জীবনের শেষ বেলা পর্যন্ত! আর এই সমস্যাগুলোই মানুষের অন্তর আত্মাকে পেরেশানি ও হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। যার দরুন মানুষ হতাশ ও ক্লান্ত হয়ে জীবনের গতিপথ হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে গিয়ে হারিয়ে যায় অজনা অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দরের পথে।
কিন্তু যারা মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি একনিষ্ঠভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারা কখনোই তার গতিপথ থেকে হারিয়ে যায় না। জীবনের চলার পথে যতই উত্থান পতন আসুক না কেন মুমিন তার অন্তর আত্মাকে প্রশান্ত রাখে রাব্বুল আলামীনের স্মরনের মাধ্যমে।
এ ধরনের মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ-
"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়"। (রাদ-২৮)

الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ طُوبَى لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ -
"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল"। (রাদ-২৯)

অর্থাৎ জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পথ চলায় বিপদ-আপদ, ক্ষয়ক্ষতি, অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার যাই আসুক না কেন, মুমিন কখনোই মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি বিশ্বাসে সংকীর্নতা প্রদর্শন করে না। অপকর্মে লিপ্ত হয় না। চরম খারাপ মুহুর্তেও অন্যায় ও অসত্যের পথে ধাবিত হয় না৷ সর্বদা রবের বিশ্বাস হৃদয়ে লালন করার পাশাপাশি তার স্মরণের মাধ্যমে অন্তরের সকল দুঃখ, হতাশা, ক্লান্তি দূর করে দিয়ে আমলে সালেহ করার মাধ্যমে মহান রব্বুল আলামীনের ঘোষিত 'মনোরম প্রত্যাবর্তনস্থল' তথা জান্নাতের পথে নিজেকে ধাবমান রাখে।
> তাই যখনই হতাশা, অস্থিরতা ও মনের দিক দিয়ে নিজেকে অশান্ত মনে করবেন সাথে সাথে অজু করে নিবেন, ইস্তেগফার ও তাসবীহ পাঠ করবেন। বেশি বেশি আল্লাহর কুদরত ও নেয়ামত স্মরণ করবেন। জান্নাতের নেয়ামতরাজি স্মরণ করবেন। কুরআন তেলোয়াত করবেন। সাধ্যমতো নফল নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। সর্বপোরি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে বেশি বেশি স্মরণ করবেন। এতে করে আপনি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেন, একই সাথে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাজত থাকতে পারবেন।
আর এভাবেই যারা তাদের অন্তর আত্মাকে প্রশান্ত রাখতে সক্ষম হবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজ সন্তুষ্টি ও বান্দাহর জন্য জান্নাতের ঘোষনা দিয়ে সূরা ফজরের ২৭-৩০ নং আয়াতে ইরশাদ করেন-

يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ
হে প্রশান্ত মন (২৭)
ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً
তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে (২৮)
فَادْخُلِي فِي عِبَادِي
অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও (২৯)
وَادْخُلِي جَنَّتِي
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর (৩০)

হে রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে আপনার স্মরণে মসগুল থাকার এবং আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আত্মাকে প্রশান্ত রেখে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকামী হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন। 

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ