আল্লাহর উপর ভরসাকারী ও লেবাসধারী; আল্লাহর কাছে কার জন্য কি রয়েছে।
(এইচ.এম নূর আলম ফয়সাল)
♦ইসলামের বিধান অনুযায়ী পূর্ণ উদ্যমে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কোন কাজ করার সাথে সাথে তার সফলতার জন্য পুরোপুরিভাবে আল্লাহর উপর আস্থা এবং ভরসা ও নির্ভর করতে হবে। তবেই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হওয়া যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَّيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُؕ وَمَنۡ يَّتَوَكَّلۡ عَلَى اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَىۡءٍ قَدۡرًا﴾
অর্থ - " এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবেনা। আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চিয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সূরা ত্বালাক- ৬৫ঃ৩)
فَمَاۤ اُوۡتِيۡتُمۡ مِّنۡ شَىۡءٍ فَمَتَاعُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَاۚ وَمَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَيۡرٌ وَّاَبۡقٰى لِلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَلٰى رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُوۡنَ﴾
অর্থ- যা-ই তোমাদের দেয়া হয়েছে তা কেবল দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপকরণ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা যেমন উত্তম তেমনি চিরস্থায়ী। তা সেই সব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর ভরসা/ নির্ভর করে। (সূরা শুরা- ৪২ঃ৩৬)
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তোমরা যদি সত্যিকারভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা করো তবে তিনি পাখিদের মতোই তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালিপেট বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে।আসে। (তিরমিযী)
♦ ইসলাম এবং মুসলিম সমাজে এমন কিছু লোক দেখা যায়, যারা বন্য ইঁদুরের মতো একটি গর্তে প্রবেশ করেছে, যার রয়েছে একটি প্রবেশ পথ ও একটি বহির্গমন পথ। অর্থাৎ এরা অতিমাত্রায় হেকমত বা কৌশলী হতে গিয়ে পারতপক্ষে নিজের অজান্তেই মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করতেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اِنۡ يَّنۡصُرۡكُمُ اللّٰهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمۡۚ وَاِنۡ يَّخۡذُلۡكُمۡ فَمَنۡ ذَا الَّذِىۡ يَنۡصُرُكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِهٖؕ وَعَلَى اللّٰهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ﴾
অর্থ- "আল্লাহ যদি তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তিই তোমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তাহলে এরপর কে আছে তোমাদের সাহায্য করার মতো? কাজেই সাচ্চা মুমিনদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত"। (আলে-ইমরান ৩ঃ১৬০)
এ আয়াত থেকে এটাই শিক্ষা নিতে হবে যে, কুফুরী/পাপাচারী/মুশরিক/ হারাম ইত্যাদি বিষয়ের সাথে আপোষ করে চলা ইমানদারের কাজ নয়। বিপদে, মুসীবতে, সফলতায় সকল ক্ষেত্রে ভরসা ও সম্পর্ক থাকবে একমাত্র আল্লাহর সাথে।
وَاِذَا لَقُوۡا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡآ اٰمَنَّاۖ ۚ وَاِذَا خَلَوۡا اِلٰى شَيٰطِيۡنِهِمۡ قَالُوۡآ اِنَّا مَعَكُمۡۙ اِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَهۡزِءُوۡنَ﴾
অর্থ- "যখন এরা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয়, বলেঃ “আমরা ঈমান এনেছি”, আবার যখন নিরিবিলিতে নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো আসলে তোমাদের সাথেই আছি আর ওদের সাথে তো নিছক তামাশা করছি।” (সূরা বাকারা- ২ঃ১৪)
يَسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ اللّٰهِ وَهُوَ مَعَهُمۡ اِذۡ يُبَيِّتُوۡنَ مَا لَا يَرۡضٰى مِنَ الۡقَوۡلِؕ وَكَانَ اللّٰهُ بِمَا يَعۡمَلُوۡنَ مُحِيۡطًا﴾
অর্থ- "এরা মানুষের কাছ থেকে নিজেদের লুকাতে চায় কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায়না। তিনি তো তখনো তাদের সাথে থাকেন যখন তারা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে তিনি (আল্লাহ) যা চান না এমন বিষয়ের পরামর্শ করে। আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন"। (সুরা নিসা- ৪ঃ১০৮)
এজাতীয় লোকদের ব্যাপারে নিকৃষ্ট উদাহরন দিয়ে- ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেছেন 'এদের অবস্থা এমন কাম পীড়িতা চঞ্চলা ছাগলীর মতো, যে দুটি নর ছাগলের সাথে যোগাযোগ রাখে, কখনো এটির দিকে ছুটে যায় আবার কখনো অপরটির দিকে দৌড়িয়ে আসে"। (মুসলিম)
এছাড়াও এদের পরিচয় পবিত্র কুরআন এভাবে উম্মোচন করেছে-
وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ يَّقُوۡلُ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ فَاِذَاۤ اُوۡذِىَ فِىۡ اللّٰهِ جَعَلَ فِتۡنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللّٰهِؕ وَلَٮِٕنۡ جَآءَ نَصۡرٌ مِّنۡ رَّبِّكَ لَيَقُوۡلُنَّ اِنَّا كُنَّا مَعَكُمۡؕ اَوَلَيۡسَ اللّٰهُ بِاَعۡلَمَ بِمَا فِىۡ صُدُوۡرِ الۡعٰلَمِيۡنَ﴾
অর্থ- "লোকদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি কিন্তু যখন সে আল্লাহর ব্যাপারে নিগৃহীত (ইমানের উপর চলার কারনে আক্রান্ত হয়েছে) হয়েছে তখন লোকদের চাপিয়ে দেয়া পরীক্ষাকে আল্লাহর আযাবের মতো মনে করে নিয়েছে। এখন যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে বিজয় ও সাহায্য এসে যায়, তাহলে এ ব্যক্তিই বলবে, 'আমরা তো তোমাদের সাথে ছিলাম।' বিশ্ববাসীদের মনের অবস্থা কি আল্লাহ ভালোভাবে জানেন না"?
♦ সবশেষ কথা হলো, জীবনের সকল ক্ষেত্র ও প্রয়োজনে মুসলমান এবং মুমিন কখনো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে কোন প্রকার আপোষ করতে পারেনা। তারা সর্বদা আল্লাহর উপর নির্ভর ও ভরসা করবে। আর এমনি করেই জীবনের চুডান্ত সফলতা লাভ করতে পারবে। অন্যথায় সাময়িক চাকচিক্যের যাতাকলে কিছু সুখ পেলেও অনন্ত জীবনে তার জন্য কিছুই থাকবেনা বরং ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ بِشَىۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَالۡجُوۡعِ وَنَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوٰلِ وَالۡاَنۡفُسِ وَالثَّمَرٰتِؕ وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيۡنَۙ﴾
অর্থ- আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ"। (সুরা বাকারা- ২ঃ১৫৫)
الَّذِيۡنَ اِذَآ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِيۡبَةٌ ۙ قَالُوۡٓا اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّآ اِلَيۡهِ رٰجِعُوۡنَ﴾
অর্থ - "এবং যখনই তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে"। (সূরা বাকারা- ২ঃ১৫৬)
হে মহান রাব্বুল আলামীন, আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে পূর্ণ একাগ্রতা সহকারে আপনার উপর ভরসা করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
@HMNAF
Comments
Post a Comment