আল্লাহর কাছে প্রার্থনা হোক তার শেখানো কালামের মাধ্যমেঃ(পর্ব-০২)

                  #সূরা_ফাতিহা
♦অনুবাদঃ
১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।
২. যিনি অতি মেহেরবান ও দয়ালু।
৩. যিনি বিচার দিনের মালিক।
৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।
৫. আমাদেরকে সহজ, সরল পথ দেখান।
৬. সে সমস্ত লোকদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।
৭. তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

♦এটি রাসূল (স) এর উপর অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। অবশ্য এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত, সূরা মুযাম্মিল ও সূরা মুদ্দাসসিরের কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছিলো।
♦সূরা ফাতিহার ফযীলতঃ এ সম্পর্কে রাসূল (স) এর হাদীসঃ
১.  হাদীসঃ হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার কুদরতী হাতে আমার জান রয়েছে, সূরা ফাতিহার মত সূরা তাওরাত, যাবুর, ইনজিল ও কুরআনের বাকি অংশের কোথাও নেই। (তিরমিযী)
২.  হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন যে, সূরা ফাতিহার ফযীলত সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে কোন রোগের জন্য ঔষধ। (দারিমী)
৩. একটি বর্ণনায় আছে যে, যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পাঠ করে নিজ শরীরে ফুঁক দিবে সে মৃত্যু ব্যতীত সকল মুসীবত থেকে নিরাপদ থাকবে।
(মুসনাদে বাযযার)

♦ সূরা সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ
আসলে এ সূরাটি হচ্ছে একটি দোয়া।
পবিত্র কুরআনের  শুরুতে একে স্থাপন করে যেন এ কথাই বুঝানো হচ্ছে যে, যদি প্রকৃত  অর্থে কেউ এই কিতাব থেকে উপকৃত হতে চায় তাহলে সে যেন বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। পবিত্র কুরআন  ও হাদীসে এর অনেক ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।

★অর্থাৎ যে কোন ব্যক্তি এ গ্রন্থটি পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন। গ্রন্থের শুরুতে এর স্থান দেয়ার অর্থই হচ্ছে এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তুমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো।

★মানুষের মনে যে বস্তুটির আকাংখা ও চাহিদা থাকে স্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়া করে যখন অনুভব করে যে, যে সত্তার কাছে সে দোয়া করছে তার আকাংখিত বস্তুটি তারই কাছে আছে। কাজেই কুরআনের শুরুতে এই দোয়ার শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা ওলটাও এবং নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস--- একথা জেনে নিয়ে একমাত্র তাঁর কাছেই পথনির্দেশনার আর্জি পেশ করেই এ গ্রন্থটি পাঠের সূচনা কর।

★এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন ও সূরা ফাতিহার মধ্যকার আসল সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এ সম্পর্কটি দোয়া ও দোয়ার জবাবের পর্যায়ভুক্ত। সূরা ফাতিহা বান্দার পক্ষ থেকে একটি দোয়া। আর কুরআন তার জবাব আল্লাহর পক্ষ থেকে। বান্দা দোয়া করে, হে মহান প্রভু! আমাকে পথ দেখাও। জবাবে মহান প্রভু এই বলে সমগ্র কুরআন তার সামনে রেখে দেন ____ এই নাও সেই হিদায়াত ও পথের দিশা যে জন্য তুমি আমার কাছে আবেদন জানিয়েছ।

★ইবাদাত শব্দটিও আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। (১) পূজা ও উপাসনা করা, (২) আনুগত্য ও হুকুম মেনে চলা এবং (৩) বন্দেগী ও দাসত্ব করা। এখানে একই সাথে এই তিনটি অর্থই প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আমরা তোমার পূজা-উপাসনা করি, তোমার আনুগত্য করি এবং তোমার বন্দেগী ও দাসত্বও করি। আর আমরা তোমার সাথে এ সম্পর্কগুলো রাখি কেবল এখানেই কথা শেষ নয় বরং এ সম্পর্কগুলো আমরা একমাত্র তোমারই সাথে রাখি। এই তিনটি অর্থের মধ্যে কোনো একটি অর্থেও অন্য কেউ আমাদের মাবুদ নয়।

★তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেবল ইবাদাতের নয় বরং আমাদের সাহায্য প্রার্থনার সম্পর্কও একমাত্র তোমারই সাথে রয়েছে। আমরা জানি তুমিই সমগ্র বিশ্ব-জাহানের রব। সমস্ত শক্তি তোমারই হাতে কেন্দ্রভূত। তুমি একাই যাবতীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের অধিকারী। তাই আমাদের অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য আমরা একমাত্র তোমারই দুয়ারে ধর্ণা দেই। তোমারই সামনে নিজেদের সুপর্দ করে দেই এবং তোমারই সাহায্যের ওপর নির্ভর করি। এ জন্য আমাদের এই আবেদন নিয়ে আমরা তোমার দুয়ারে হাজির হয়েছি

★জীবনের প্রত্যেকটি শাখা প্রশাখায় এবং প্রত্যেকটি বিভাগে, চিন্তা, কর্ম ও আচরণের এমন বিধি-ব্যবস্থা আমাদের শেখাও, যা হবে একেবারেই নির্ভুল, যেখানে ভুল দেখা, ভুল কাজ করাও অশুভপরিণামেরআশঙ্কা নেই, যে পথে চলে আমরা সাফল্য ও সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারি। কুরআন অধ্যয়নের প্রাক্কালে বান্দা তার প্রভু, মালিক, আল্লাহর কাছে এই আবেদনটি পেশ করে। বান্দা আর্জি পেশ করে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের পথ দেখাও। কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্য থেকে যথার্থ সত্যকে উন্মুক্ত করে আমাদের সামনে তুলে ধর। বিভিন্ন নৈতিক চিন্তা-দর্শনের মধ্য থেকে যথার্থ ও নির্ভুল নৈতিক চিন্তা-দর্শন আমাদের সামনে উপস্থাপিত কর। জীবনের অসংখ্য পথের মধ্য থেকে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি আমাদের দেখাও।

সূত্র:  মা'রেফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি।

(এইছ.এম নূর আলম ফয়সাল)

Comments

পপুলার পোস্ট

দারসুল কুরআনঃ ইসলামী আন্দোলন ও বাইয়াতের গুরুত্ব | এইচ.এম নুর আলম ফয়সাল|আলোর মশাল ব্লগ

দারসুল কুরআন| রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আহ্বানে করনীয় | সূরা মুদ্দাসসির (১-৭)

দারসুল হাদীস : পাচটি বিষয়ের নির্দেশ